বিএনএ, ঢাকা: মো. আইয়ুব খান চৌধুরী। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পেট্রোবাংলার পরিচালক। তার দুর্নীতির তদন্ত করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের আলোচিত সমালোচিত উপ পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে শরীফ উদ্দিন একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। অবশেষে সেই মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার পুত্র আশিকুল্লাহ চৌধুরীর যাবতীয় ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-এনবিআর
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়েছে এনবিআর-এর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে। চিঠিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে এ সংক্রান্ত পরিপালন প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে জানাতে বলা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা আয়ুব খান চৌধুরী জামায়াত ঘরোনা হলেও হাল আমলে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ ঘরোনার সরকারি অফিসার বলে প্রচার করেন। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে সাতকানিয়া এলাকার এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে। ফলে তিনি লাগামহীনভাবে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আয়ুব খান চৌধুরী।
নিজেকে আওয়ামী লীগ ঘরোনার অফিসার পরিচয় দিয়ে বলেন, মহল বিশেষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ করেছে। নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত বলে দাবি করেন আয়ুব খান চৌধুরী।
নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতা গায়েব
দুদক সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) নিয়োগ জালিয়াতি ও পদোন্নতির অভিযোগ ছিল ভয়াবহ। নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৭ কর্মকর্তা ফেল করলেও তিনি তাদের নিয়োগ দেন। এদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিল না। তবুও ৩৭ জন লোক ‘নিয়োগ’ পেয়েছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে তাদের কোনো নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। এদের নিয়োগ পরীক্ষার কোনো নথি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতার কিছুই পাওয়া যায়নি। কারো কারো সনদও জাল। কেউ কেউ পাসের আগে পাস দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন নিয়োগের সময়।
কেজিডিসিএল এর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আইয়ুব খান চৌধুরী নিয়োগ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে অর্ধডজন মামলার সুপারিশ দিয়েছিলেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। যা এখনো কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অনেকগুলো অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রাণে মেলে ফেলার হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শরীফ উদ্দিন।
জিডিতে বলা হয়, শরীফের স্ত্রী ও দুই সন্তান দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের খুলশী থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি কর্মসূত্রে পটুয়াখালীতে থাকেন। তিনদিনের ছুটিতে চট্টগ্রামে এলে ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক লোককে নিয়ে তার বাসার নিচে আসেন আইয়ুব খান। সঙ্গের জন নিজেকে এলজিইডির লোক বলে পরিচয় দেন। দারোয়ানের উপস্থিতিতে তারা শরীফকে হুমকি দিয়ে বলেন, আইয়ুবের বিরুদ্ধে কেন নিউজ করাচ্ছি? এক পর্যায়ে তারা ফোন দিয়ে বাইরে থেকে লোকবল ডাকেন। শরীফ ও তার পরিবারকে এ সময় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। জিডির সঙ্গে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংযুক্ত করা হয়েছে। হুমকি-ধমকির এই ঘটনার পরে দুদকের চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় শরীফকে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান আইয়ুব খান চৌধুরী। সেখানে তার দুই ছেলেকে নিয়োগ দিতে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বড় ছেলে আশিকুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়োগে বোর্ডের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেন আইয়ুব খান। বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া। কিন্তু তা না করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিধিবহির্ভূতভাবে পেট্রোবাংলার মাধ্যমে পরীক্ষা নেন ।
উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদের জন্য পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক হলেও আশিকুল্লাহ চৌধুরীর ব্যক্তিগত নথিতে অভিজ্ঞতার সনদ খুঁজে পায়নি দুদক। এমনকি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও অভিজ্ঞতার সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইয়ুব তার ছোট ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কেজিডিসিতে নিয়োগ দিতেও নানান অনিয়মের আশ্রয় নেন।
আরও পড়ুন : নবাবের রূপধারণ: পরিণতি ৭ বছর কারাদণ্ড!
দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে দুই ছেলের পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য একজনকে অসারণ করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা, জনবল কাঠামো লঙ্ঘন করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন অবৈধ সংযোগ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০১
বিএনএনিউজ২৪, ওয়াই এইচ, জিএন