বিএনএ, ডেস্ক : চট্টগ্রামের টাইগার পাস নেভি কনভেনশন হলে শনিবার রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের ছোট ভাই ফখরুল আনোয়ারের মেয়ের সঙ্গে সাবেক মেয়র মন্জুরুল আলমের নাতনীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো। সন্ধ্যা থেকে অতিথিরা আসতে শুরু করে। অতিথিরা ভুরিভোজের পাশাপাশি আনন্দ আড্ডায় মেতে ওঠে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শতাধিক যুবক নেভি কনভেশন সেন্টারে প্রবেশ করে।
তাদের অভিযোগ, সাবেক সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ও রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে সাবেক সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামী। তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।
যুবকরা এই সময়, ওই দুই সংসদ সদস্যের খোঁজে সেখানে তল্লাসি চালাতে থাকে। এতে বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে তাদের বাক-বিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে পন্ড হয়ে যায় বিয়ের অনুষ্ঠান। খবর পেয়ে উপস্থিত হয় নৌ-বাহিনীর সদস্যরা।তারা পরিস্থিতি শান্ত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু যুবকদের কয়েকজন নৌ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূল আচরণ করে। এক পর্যায়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা লাঠি চার্জ করে। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশও। তারা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফখরুল আনোয়ারকে আটক করে খুলশী থানায় নিয়ে যায়।
উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে আগুনে ‘ঘি’ ঢেলে দেয় প্রবাসী পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেন। তিনি লিখেন, ‘চট্টগ্রাম টাইগার পাস নেভী কনভেনশন হলে দলে দলে যান ভাইয়েরা। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিরে আটকানো হইছে। সাথে আছে ফটিকছড়ির সাবেক এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনিসহ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিপুল নেতাকর্মী । সব কয়টা হত্যা মামলার আসামী। ছাত্রদের অভিযোগ নেভী গ্রেপ্তার করতে দিচ্ছে না, লুকিয়ে রাখছে টয়লেট আর রান্না ঘরে’ ।
তিনি আরও লিখেন, মাইজ ভান্ডারির মামলায় সাঈদি সাহেবকে সাজা দেওয়া হইছে। এখুনি যান ভাইয়েরা। এই খুনিদের পালাইতে দিয়েন না। এখুনি দৌড় লাগান নেভি কনভেনশন সেন্টারে। বীর চট্টলাবাসী জাগেন, জাগান। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। পিনাকীর এই পোস্টটি দ্রত ফেসবুকে ভাইরাল হয়। দলে দলে ছাত্র- জনতা চট্টগ্রামের টাইগারপাস নেভি কনভেনশন সেন্টারের সামনে আসতে থাকে। তারা পুরো কনভেনশন সেন্টার ঘেরাও করে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে বেশ কিছু ছাত্র-যুবক কনভেনশন সেন্টারের বন্ধ গেইট টপকে ভিতরে প্রবেশ করে। এই সময় ভিতরে থাকা অতিথিদের সঙ্গে ফের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খরব পেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমদ ও অন্যরা পরিস্থিতি শান্ত করতে নৌ-বাহিনী ও পুলিশকে সহায়তা করে। তারা আটকে থাকা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সহায়তা করে। ওই সময় ছাত্র প্রতিনিধি নৌবাহিনী-পুলিশ যৌথভাবে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনির খোঁজে তল্লাসী চালায়। কিন্তু কোথাও তাদের পাওয়া যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়।
এদিকে গভীর রাতে নৌবাহিনী, পুলিশ এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ছাত্র প্রতিনিধিরা বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করে এবং ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়। এরপর ভোর ৪টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থক ছাত্র- জনতা তাদের অবরোধ তুলে নেয়। ফিরে আসে স্বস্তি। বিয়েতে আসা আটকে পড়া অতিথিরা নেভি কনভেনশন সেন্টার ত্যাগ করে। অবসান হয়, শ্বাসরুদ্ধকর ৫ ঘন্টার এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী