বিএনএ নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: সুন্দরবন। প্রাকৃতিক নৈসর্গিকের এক অপরূপ লীলাভূমি। তবে ইউনেস্কো স্বীকৃত এ বনভূমিকে দীর্ঘদিন ধরে জিম্মি করে রেখেছিল বনদস্যু-জলদস্যুরা। র্যাবের সাহসী এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বনটি এখন হানাহানিমুক্ত। প্রায় তিন শতাধিক জলদস্যু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় সুন্দরবন ফিরে পেয়েছে তার স্বাভাবিক রূপ।
সোমবার (১ নভেম্বর) ৩ বছর পার হতে যাচ্ছে জলদস্যু মুক্ত সুন্দরবনের। এ উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে র্যাব।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শান্তির সুবাতাস বইছে সুন্দরবনে। অপহরণ ও হত্যা, মানুষ জিম্মি অতীত হয়ে গেছে। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জন অর্থ তারা ভোগ করতে পারছে। বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ।
তিনি বলেন, দস্যুমুক্ত সুন্দরবন বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সুন্দরবনের দৃশ্যমান উপস্থিতি রাখতে দুবলার চর ও মুন্সিগঞ্জে ক্যাম্প স্থাপন ও অভিযানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পায়ে হেঁটে নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে যারা আত্মসমর্পণ করেছে সেইসব জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের আর্থিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে রাখতে যা যা করণীয় আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
র্যাব জানায়, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন। তারই অংশ হিসেবে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’র ৩য় বর্ষপূর্তি। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান এবং র্যাবের কর্মতৎপরতায় দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। এ সাফল্য অর্জনে র্যাব পেয়েছে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালবাসা।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন উপকূলের বনজীবি ও মৎস্যজীবীরা ৮০ দশকে জিম্মি হয়ে পড়ে জলদস্যু ও বনদস্যুদের তাণ্ডবে।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। ওই বছর থেকে লিড এজেন্সি হিসেবে র্যাবের জোরালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। উপর্যুপরি অভিযানে ফেরারি জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় জলদস্যুরা।
র্যাবের ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ১ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। ফলে সম্পূর্ণরূপে জলদস্যু মুক্ত হয় সুন্দরবন।
আত্মসমর্পণ পরবর্তী পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জলদস্যুদের প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান, সরকার কর্তৃক আইনি সহায়তা এবং র্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সুন্দরবনের সকল জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
র্যাব আরো জানায়, সম্প্রতি র্যাব পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মাঝে ঘর, দোকান, নৌকা, জাল ও গবাদি পশু হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। যা তাদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে শান্তির সুবাতাস বইছে সুন্দরবনে। অপহরণ, হত্যা এখন অতীত। নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে আসছে দর্শনার্থী-পর্যবেক্ষক, জাহাজ বণিকেরা। এভাবেই সরকারের দূরদর্শিতায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ