29 C
আবহাওয়া
১১:১২ পূর্বাহ্ণ - মে ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১০ (বরগুনা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১০ (বরগুনা-২)


বিএনএ, ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে।  এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম।  আজ থাকছে বরগুনা-২ আসনের হালচাল।

বরগুনা-২ আসন 

বরগুনা-২ সংসদীয় আসনটি বামনা উপজেলা, পাথরঘাটা এবং বেতাগী উপজেলা নিয়ে গঠিত, এই আসনটি জাতীয় সংসদের ১১০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম মনি বিজয়ী 

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৬  শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৯ হাজার ৩৭ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম মনি বিজয়ী হন।  মোরগ প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ৬ শত ১৬ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের গোলাম কবির। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৩ হাজার ৭ শত ৬৪ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গোলাম সরোয়ার হিরুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।  ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির গোলাম সরোয়ার হিরুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১দিন।  তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: ইসলামি ঐক্যজোট এর গোলাম সরোয়ার হিরু বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ২ শত ৭৫ জন।  ভোট প্রদান করেন ৮০ হাজার ৫ শত ৩৫ জন।  নির্বাচনে ইসলামি ঐক্যজোট এর গোলাম সরোয়ার হিরু বিজয়ী হন। মিনার প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৮ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২০ হাজার ৫ শত ৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি বিজয়ী 

২০০১ সালের ১ অক্টোবর  অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত ৮২ জন।  ভোট প্রদান ৯২ হাজার ৩ শত ৬০ জন। নির্বাচনে বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের গোলাম সরোয়ার হিরু।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৭ শত ৭২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের গোলাম সবুর টুলু বিজয়ী 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২ হাজার ৬ শত ১৪ জন।  ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭ শত ১১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম সবুর টুলু বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯০ হাজার ১শত ৬১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খন্দকার মাহবুব হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৪ শত ৩৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৪ শত ৬২ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন নির্বাচিত হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৭ হাজার ৩ শত ৮২ ভোট।  তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন শিকদার। মোরগ প্রতীকে তিনি পান ১৬ হাজার ১ শত ২৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩ শত ৬৬ জন।  ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২০ হাজার ৯ শত ৮৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন।  নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান (রিমন), ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির খন্দকার মাহবুব হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমান, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলাম সরোয়ার হিরু, টেলিভিশন প্রতীকে বি এন এফ এর জাকির হোসেন ও মিনার প্রতীকে ইসলামি ঐক্যজোটের বশির উদ্দিন বিশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন বিজয়ী হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ  ৩ শত ২৫ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খন্দকার মাহবুব হোসেন।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৯ হাজার ৫শত ১৮ ভোট।  কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বরগুনা-২ আসনে পঞ্চম সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম সংসদে ইসলামী ঐক্যজোট এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় ।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ  

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বরগুনা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৪.০৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৯.৯৪%, বিএনপি ৪.১৬%, জাতীয় পার্টি ০.২২% ,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৭৫.৬৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.০৭% ভোটার।  প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৫৮%, বিএনপি ২৫.৪৬%, জাতীয় পাটি ২১.৪০ %, জামায়াতে ইসলামী ১.৯৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২৮.৫৯ % ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৪১% ভোটার।  প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.৮২%, ৪দলীয় জোট ৪৭.৬৫%, জাতীয় পাটি ৩.১৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২২.৩৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৩৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.৪২ %, ৪ দলীয় জোট ৯.৪৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৪০.১৫% ভোট পায়।

বরগুনা-২ (বামনা, পাথরঘাটা এবং বেতাগী উপজেলা) নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে আরও  মনোনয়ন চাইবেন প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর স্ত্রী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন-অর রশিদ, বামনা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন।

এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বরগুনা জেলা বিএনপির সম্পাদকমন্ডলীর সাবেক সদস্য, মনিরুজ্জামান মনির ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনি।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন আবদুস ছালাম, মাওলানা জাকারিয়া হামিদি, অধ্যাপক নাজমুল হুদা।  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার হিরু।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরগুনা-২ সংসদীয় আসনটি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম সবুর টুলুর মাধ্যমে, পাকাপোক্ত করে আওয়ামী লীগ। ২০১৩ সালে এই আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও নাদিরার স্বামী গোলাম সবুর টুলু এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।  শোকে মুহ্যমান টুলু পরিবার রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়।  ফলে ২০১৪ সালে শওকত হাচানুর রহমান রিমনই মনোনয়ন পান এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদেও তিনি বহাল থাকেন এবং নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নির্বাচনের আগে রিমনকে মনোনয়ন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। ইতিমধ্যে তিন কন্যাকে নিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা। বড় মেয়ে ফারজানা সবুর রাজনীতিতে পদার্পণ করেন এবং বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।  টুলু ফাউন্ডেশনের ব্যানারে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করছেন মেজ মেয়ে সাবরিনা সবুর তিন্নি ও ছোট মেয়ে ব্যারিস্টার হাসানা নাদিরা তিয়াশা।

বরগুনা-২ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় হলেও অন্তদলীয় কোন্দল রয়েছে। নির্বাচনে যার প্রভাব পড়বে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় না হলেও জামায়াতে ইসলামীর ওপর ভর করে বিএনপি এই আসনটিতে, দখলে নিতে এখন থেকে তৎপর রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১০তম বরগুনা-২ সংসদীয় আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিবে না বিএনপি।

বিএনএ/ শিরীন,রেহানা ইয়াসমিন, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ