40 C
আবহাওয়া
৫:৪২ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বন্দি সাংবাদিকের মুক্তি দাবি, বৃদ্ধা মা’র আহাজারি

বন্দি সাংবাদিকের মুক্তি দাবি, বৃদ্ধা মা’র আহাজারি

বন্দি সাংবাদিকের মুক্তি দাবি, বৃদ্ধা মা'র আহাজারি

বিএনএ, সাভার : প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ধামরাইয়ের কর্মরত সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন। এসময় চাতক পাখির মতো কোথা থেকে যেন ছেলের মুক্তির জন্য ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হাজির শামসের মা করিমন নেসা। তার আহাজারিতে ধামরাইয়ের বাতাস ভারী হয়ে যায়।

শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাব ও ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের যৌথ আয়োজনে সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।

সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মা করিমন নেসা মানববন্ধনে কান্না জড়িত কণ্ঠে তার ছেলেকে বুকে ফিরে পাওয়ার আর্জি জানায়। শামসের মা’র আর্তচিৎকারে ধামরাইয়ের বাতাস ভারী হয়ে উঠে। তার আহাজারিতে স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। করিমন নেসা কিছু সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সংবাদে ছবি ও ক্যাপশনে অসঙ্গতি থাকায় ১৭ মিনিটের মাথায় সেই কার্ডযুক্ত ছবি প্রত্যাহার করে প্রথম আলো। সেই সংবাদের প্রেক্ষিতে পাল্টা সংবাদ পরিবেশন করে বিতর্ককে উসকে দেয় একটি বেসরকারি টেলিভিশন। ওই টেলিভিশনের সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশের পর মূল ঘটনাকে বাদ দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। শামসুজ্জামান শামসের নামে কোনো ধরনের মামলা ও অভিযোগ ছাড়া ভোররাতে সিআইডি পুলিশ পরিচয়ে ভাড়া বাসা থেকে আটক করে নির্যাতনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেয়। যা উচ্চ আদালতের আইনকে অবমাননা করার শামিল। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী আসামিকে আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার আদেশ থাকলেও প্রায় ৩০ ঘন্টা পরে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস’কে আদালতে হাজির করা হয়।

এসময় বক্তারা বলেন, টেলিভিশনটিতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গভীর রাতে শামসুজ্জামান শামস’কে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন তাকে তুলে নিতে সহযোগিতা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখে ফেলার পরেও কোন ধরনের খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টির সত্যতা প্রকাশ করতে হয়েছে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এ বিষয়টি অনেকটা উদ্বেগের।

বক্তারা আরও বলেন, শামসুজ্জামান শামস শুধু একজন সাংবাদিক নয়। তিনি রাজধানীর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার নিহত শহীদ ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) রবিউল ইসলামের আপন ছোট ভাই। শামসকে তুলে নেওয়ার সময় সাদা পোশাকে থাকা কয়েকজন দাবি করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় যেই মায়ের পেটে রবিউল ইসলামের মত দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তার জন্ম হয় সেই মায়ের পেটে জন্ম নেওয়া শামসুজ্জামান কখনোই রাষ্ট্রবিরোধী হতে পারেন না। তাই আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক শামীম খান, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সাংবাদিক আদনান হোসেন, রিপোর্টার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি বাংলা টিভির সাংবাদিক হুমায়ুন রশিদ, ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সাংবাদিক ইমরান খান, ধামরাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক সোহেল রানা, মানবকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির, বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, দেশের কণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক সম্রাট আলাউদ্দিন, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সহ ধামরাই, সাভার ও আশুলিয়ার কর্মরত শতাধিক সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের সহকর্মী শামসুজ্জামান শামসকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে সেই আইন বাতিলের দাবিও জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের জেরে ২৮ মার্চ ভোর চারটার দিকে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের আমবাগান এলাকায় শামসুজ্জামানের বাসা থেকে সাদা পোশাক পরিহিত সিআইডি পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা শামসুজ্জামানের বাসা থেকে তল্লাশি করে তাঁর ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে রমনা থানার এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুক্রবার সকালে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে সাড়ে দশটায় কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগার-১-এ নেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আবার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

বিএনএনিউজ/ ইমরান খান, বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ