39 C
আবহাওয়া
৬:২৭ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯ (রংপুর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯ (রংপুর-১)

রংপুর-১

বিএনএ, ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে রংপুর-১ আসনের  হালচাল।

রংপুর-১ আসন

রংপুর-১ সংসদীয় আসনটি রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলা এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৯ নাম্বার আসন।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লুৎফুর রহমান বিজয়ী

১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৯ নামে পরিচিত ছিল।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৭ হাজার ৭ শত ৭২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লুৎফুর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৫ শত ৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর আজিজুল হক। তিনি পান ৪ হাজার ২শত ৪৬ ভোট।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোহাম্মদ ইলিয়াস  বিজয়ী

১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-৮ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৫ হাজার ৭ শত ৩১ জন। বিএনপির মোহাম্মদ ইলিয়াস  বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ১ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আমিনুল হক চৌধুরী। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার  ৯ শত ৭৪ ভোট।

তৃতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির ময়েন উদ্দিন সরকার নির্বাচিত

১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৮ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, রংপুর-১।নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯ হাজার ৯  শত ২৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ময়েন উদ্দিন সরকার  বিজয়ী হন।  তিনি পান ২১ হাজার ১২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  জামায়াত ইসলামীর শাহ মোহাম্মদ রুহুল ইসলাম। তিনি পান ২০ হাজার ৯ শত ৭৭ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির ময়েন উদ্দিন সরকার  পুনরায় নির্বাচিত

১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে  জাতীয় পার্টির ময়েন উদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ২ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সম্মিলিত বিরোধী দলের আবুল কাসেম। তিনি পান ২০ হাজার ৪ শত ৩০ ভোট।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন:জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিজয়ী

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে ভোটার  ছিলেন ১ লাখ ৬৩ হাজার  ৯৩  জন। ভোট প্রদান করেন ৮৮ হাজার ৫ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মুজিবুর রহমান প্রামাণিক। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ২০ হাজার ৩ শত ১০ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ফলে ভোটগ্রহণ পন্ড হয়ে যায়।  ১১ দিন মেয়াদী এই আসনে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি!

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির শরফুদ্দিন আহমেদ বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫ শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২১ হাজার ২ শত ৯৪ জন।  নির্বাচনে  জাতীয় পার্টির শরফুদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৩ শত ৭৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মোসবা উদ্দিন আহমেদ। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৩ শত ৭৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা বিজয়ী 

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৯শত ৭ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৮ শত ১২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  জামায়াত ইসলামীর শাহ রুহুল ইসলাম। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ২ শত ৭৮ ভোট।

নবম সংসদ  নির্বাচন: জাতীয় পার্টির হোসেন মুকবুল শাহরিয়ার বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯শত ৬০ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯ হাজার ৬ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হোসেন মুকবুল শাহরিয়ার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯ শত ৫৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামী মোহাম্মদ আব্দুল গনি। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ২ শত ৭০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা জয়ী

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

YouTube player

একাদশ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা বিজয়ী 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯শত ৮৯ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩২  হাজার ৪ শত ২২  জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন।

লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শাহ্ রহমত উল্যাহ,, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে বাংলাদেশের মোক্তার হোসেন, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি –এনপিপির ইসা মোহাম্মদ সবুজ, দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরগাড়ি প্রতীকে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং সিংহ প্রতীকে সিএম সাদিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী দেয়নি।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা বিজয়ী হন। লাঙ্গল  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ৪শত ৯৩ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রংপুর-১ আসনে প্রথম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় সংসদে বিএনপি,  তৃতীয়,  চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির  সাংগঠনিক অবস্থা নড়েবড়ে। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিএনএ  টীমের জরিপ 

বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়।  জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠ, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর নিউজ টিম রংপুর-২ আসনের প্রথম,পঞ্চম, সপ্তম,অষ্টম ও নবম এই ৫টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের চেষ্ঠা করছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে ভোট প্রদান করেন ৪৪.১৬ শতাংশ ভোটার। আওয়ামী লীগ ৮২.২৯% ন্যাপ মোজাফফর ৭.৩৫% ,  ন্যাপ ভাসানী ৫.৯৮%  ভোট পায়।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৪.২৯ শতাংশ ভোটার।আওয়ামী লীগ ২২.৯৪ %, বিএনপি ০.৭৮%, জাতীয়পার্টি ৫৭.৪৭ %   জামায়াত ইসলামী ১৭.৫২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.৭২ শতাংশ ভোটার। আওয়ামী লীগ ২৩.৪৯%, বিএনপি  ২.৯৮%  জাতীয়পার্টি  ৫০.৬০%  জামায়াত ইসলামী ২১.৩৭%  ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৬৩ শতাংশ।  আওয়ামী লীগ ২৬.৯৭%, চারদলীয় জোট ২৮.২১%,  জাতীয় পাটি ও ইসলামী ঐক্যজোট ৪৪.৫৫%  ভোট  পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৫৯ %। ১৪ দলীয় মহাজোট  ৮০.৬০% চারদলীয় জোট  ১৩.৪৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল  ৩.৯২%  পায়।

ভোট প্রদানের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও মাঠ পর্যায়ের জরিপে বলা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে থাকবে এটা অনেকটা নিশ্চিত।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি ,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ