35 C
আবহাওয়া
৩:২৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ২১ আগস্ট : কষ্ট যন্ত্রণায় বেঁচে আছে যারা

২১ আগস্ট : কষ্ট যন্ত্রণায় বেঁচে আছে যারা

২১ আগস্ট

বিএনএ, ঢাকা: সন্ত্রাস ও দেশব্যাপি বোমা হামলার প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। লোকে লোকারণ্য সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর ওই স্থান সেদিন হয়ে উঠেছিলো আর্তনাদের কেন্দ্রস্থল। সেদিনের এ কর্মসূচির প্রধান অতিথি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হলেও তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। প্রাণ হারান ২৪ জন মানুষ। আহত হন অসংখ্য। যাদের অনেকেই এখনো হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া নেতাকর্মীদের চোখে এখনো সেই দিনের দৃশ্য ভাসে। সেই স্লেন্টারের যন্ত্রণায় এখন প্রতি রাতে যন্ত্রণা দেয় তাদের। ২১ আগস্টেও স্মৃতি স্মরণ এলেই তারা এখনো আঁতকে ওঠেন, কান্নায় চোখমুখ ভিজে যায় তাদের।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত সাভারের মাহবুবা পারভীন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গ্রেনেডের স্পিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন পারভীন। সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলায় ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন প্রয়াত আইভি রহমানের পাশেই ছিলেন। সে দিন গ্রেনেড হামলায় পারভীন বেঁচে আছে, না মৃত কেউ বুঝতেই পারেনি। আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন। মাহবুবা গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে পড়ে থাকেন, দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার সেখানে মরদেহ শনাক্ত করতে গিয়ে মাহবুবা পারভীনকে তিনি জীবিত দেখতে পান। ৭২ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফিরে আসে।

দেশে চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে ভারতের কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। মাহবুবা পারভীনের দেহে এখনো রয়েছে ১ হাজার ৮শ স্লিন্টার। মাঝে মধ্যেই তিনি পাগলের মতো হয়ে যান। নিজ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে তার কোন খোঁজ-খবর নেয়া হয় না বলে আক্ষেপ করলেন তিনি। তবে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এখনও তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন বলেও জানালেন তিনি।

মাহবুবা পারভীন বলেন, সেই দিন যদি নেত্রী বেঁচে না যেতেন, আমরা বেঁচে থাকতাম না। ২০০৪ সাল থেকে আমাদের নেত্রী আমাদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। আমার নেত্রী ব্যতিত অন্য একজন মানুষ কখনও আমাদের খোঁজ খবর নেন নি।

তিনি বলেন, শরীরের ভেতরে থাকা ১৮শ স্প্লিন্টার প্রতি মুহূর্তে সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথাই মনে করিয়ে দেয়। স্প্লিন্টারগুলো শরীরের ভেতরে নড়াচড়া করায় যন্ত্রণা হয়। রাতে এই যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। তাই ঘুমাতে পারেন না। ঘুমানোর জন্য প্রতি রাতে ঘুমের বড়ি খেতে হয়।

রাশেদা আক্তার রুমা : শরীরে ১৬-১৭শ’ স্পি­ন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন রুমা। তার শরীরেও ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ওই ট্রাকের পেছনেই ছিলাম আমি। সারা শরীরে স্পি­ন্টার বিদ্ধ হওয়া ছাড়াও আমার ১৮টি দাঁত পড়ে যায় হামলায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহযোগিতায় চিকিৎসা করছি। ওই বর্বর হত্যাকাণ্ডের খুনিরা আজও বেঁচে আছে, এমনটা ভাবতেই যন্ত্রণা বেড়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ খুনিরা তাকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তারেক জিয়াকে দেশে এনে সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রায় দ্রুত কার্যকর করা না হলে তারা দেশবিরোধী চক্রান্ত করেই যাবে।

ডা. লুৎফুননেছা সোনালী : সারা শরীরে স্পি­ন্টার বিদ্ধ ডা. সোনালীর শরীরেও বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। বলেন, মাথায় শতাধিক স্পি­ন্টার নিয়ে বেঁচে আছি। স্পি­ন্টারের যন্ত্রণায় প্রায়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় চিকিৎসা চলছে। হামলার পর ২৭ দিন জ্ঞান ছিল না। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য আমাকে ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। দেড় মাস চিকিৎসা শেষে ডাক্তারা বলছিলেন ডান হাত ও পা কেটে ফেলতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতায় আমার হাত ও পা রক্ষা পায়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালী। বললেন, শেখ হাসিনা আছেন বলেই বেঁচে আছি। তবে দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সাহিদা তারেক দীপ্তি : গ্রেনেড হামলায় শরীরে বিদ্ধ অসংখ্য স্পি­ন্টারের যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করে দীপ্তি বলেন, স্বস্তি পাচ্ছি না কিছুতেই। স্পি­ন্টার নিয়েই দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাচ্ছি। তবে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত হলে শান্তি পাব, অন্তত শান্তিতে ঘুমাতে পারব। সেই বর্বরতার কথা ভুলে থাকা যায় না। আগুন, ধোঁয়া দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠি। মাথায় স্পি­ন্টার থাকায় প্রচণ্ড ব্যথা হয় এখনও। চিকিৎসা চলছে। বিএনপি খুনির দল উল্লেখ করে বলেন, এ দলটি দেশের উন্নয়ন চায় না, তারা ধ্বংস চায়। সস্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে আমি বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করছি।

নাসিমা ফেরদৌসী : স্পি­ন্টারের যন্ত্রণা নিয়েই কথা বলেন সাবেক এমপি নাসিমা ফেরদৌসী। তিনি বলেন, ঘুমোতে গেলেই দম আটকে আসে। শরীরজুড়েই অসহ্য যন্ত্রণা। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তবে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ দেখি তখন ক্ষণিকের জন্য সব যন্ত্রণা ভুলে যাই। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের যারা হত্যা করেছে তাদের দিয়েই খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল। বর্বর সেই হত্যাকাণ্ডের রায় হলেও তা কার্যকর হয়নি আজও। তিনি তারেক জিয়ার ফাঁসি এবং খালেদা জিয়াকে এ মামলায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ