৫:২৭ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিএনপি-অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুখোমুখি!

বিএনপি-অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুখোমুখি!


বিএনএ, ডেস্ক : যতই দিন যাচ্ছে ততই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুরত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে। রাজনৈতিক দলগুলো অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি  নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে চায়। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রয়োজন। এতে আবারো ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ দেখা যাবে। রাজনৈতিক দল গুলো বিশেষ করে বিএনপি জুলাই- আগস্ট গণ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ। দলটি মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের নামে অহেতুক সময় ক্ষেপণ করছেন নিজেরা দীর্ঘদিন ক্ষমতা চর্চা করার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে। ফলে গত ৪ মাস ধরে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বতীকালীন সরকারের টানাপোড়েন চলছে।

YouTube player

তার সত্যতাও মিলেছে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের এক মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে তাদের অধীনে সংস্কার হোক। তাই তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। তারা সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

গত ১০ ডিসেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ব্রিটিশ গ্লোবাল পার্টনার্স গভর্ন্যান্স-জিপিজি–এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধিদলের সদস্য চিলির সাবেক সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী জর্জিও জ্যাকসন সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এই কথাগুলো বলেন। তার এই ধরনের মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সারাদেশে আলোচনা- সমালোচনার ঝড় ওঠে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম বিএনপি তথ্য ও সম্প্রাচার উপদেস্টার এই বক্তব্য হজম করেনি।

শুক্রবার বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলীয় এক আলোচনা সভায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে ‘মারাত্মক একটা অভিযোগ’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহা সচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘উনি জেনে শুনে বলে থাকলে আমি অবশ্যই এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি এবং প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করছি।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।

সময়টা সবচেয়ে কঠিন বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের এখন সতর্কভাবে পার করতে হবে, প্রতিটি কথা মেপে বলা দরকার। আমরা এমন কোনো কথা বলব না, যা আমাদের এই বিজয়কে নষ্ট করে দেয়, অর্জনকে নষ্ট করে দেয়।’

ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে আশ্রয় নিয়ে তিনি তাঁর মতো কাজ করছেন। তিনি লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটা মিটিংও করেছেন ডিজিটালি। অর্থাৎ তিনি সক্রিয়। তিনি হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে তাঁর কাজ করছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরও অ্যাকটিভ হতে হবে, যাতে আমরা তাদের প্রতিহত করতে পারি, যাতে তিনি ফিরে আসতে না পারেন। সেটা কীভাবে হবে, এর একটি হলো জনগণের দৃঢ় ঐক্য, অন্যটি মেধাভিত্তিক রাজনীতি।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো ১৫ বছর লড়াই করেছি। এই ছেলেরা কী এমন অলৌকিক শক্তি পেল যে তারা দুই মাসের মধ্যে একটা যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে ফেলল। সেই শক্তিটা কী ছিল। সেই শক্তিটা ছিল সোশ্যাল মিডিয়া, সেই শক্তি ছিল তাদের কথা, তাদের লেখা, মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানো—যা আপনাদের অর্জন করতে হবে। ফেসবুক, টুইটারে যুদ্ধ করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে এই নয় যে আওয়ামী লীগ করলে তার গলা কেটে ফেলো আর বিএনপি করলে তার মুণ্ডু ছেদ করো। সেটা গণতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। তোমার কথা বলার অধিকার আছে, আমার বিরুদ্ধেও কথা বলার অধিকার আছে। আমি সেটা রক্ষা করব, এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংস্কারের নামে ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকার একটি প্রবণতা রাজনৈতিক দলগুলোর চোখে ধরা পড়েছে। সে কারণে তারা, বিশেষ করে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে। দলটি এটিও বলছে, সংস্কার অনির্বাচিত সরকার নয়- নির্বাচিত সরকারই করবে। ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিএনপি এখন মুখোমুখি অবস্থান করছে। পরস্পরের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এই আস্থার সংকট থেকেই দিন দিন সন্দেহ-অবিশ্বাস প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।

 

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ