বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার সীমান্তবর্তী ১৩ জেলায় কঠোর লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব জেলায় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। জেলাগুলোর মানুষকে বাঁচাতে তাদের যাতায়াতসহ সব ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ চায় সংস্থাটি।
এ লক্ষ্যে তারা একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে, যা আজ-কালের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যেই স্থানীয়ভাবেই দিনাজপুরে মঙ্গলবার থেকে লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য দেশের উচ্চ সংক্রমণশীল এই ১৩ জেলাকে ৩টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। এসব জেলা থেকে যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
সম্প্রতি অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দল সীমান্তবর্তী জেলা পরিদর্শন করে। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে দলটি সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
জেলাগুলোর হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর জন্য নির্ধারিত শয্যা ও আইসিইউ শয্যাগুলো পরিপূর্ণ। সীমান্ত জেলা ঘুরে আসা একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, প্রথম ক্লাস্টারে রয়েছে চারটি জেলা-কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর। এ চারটি জেলায় সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় ক্লাস্টারে রয়েছে চারটি জেলা।
এগুলো হলো : চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ। এই জেলাগুলোয় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের উপরে। তৃতীয় ক্লাস্টারে রয়েছে ৫টি জেলা। এগুলো হলো : সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও পিরোজপুর। এসব জেলায় শনাক্তের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ।
এদিকে সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৬৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এদিন ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ৫২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
আগের দিন এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। সীমান্তের পার্শ্ববর্তী নড়াইলেও সংক্রমণ বাড়ছে। শনিবার এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে হয়েছে ৫০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাগেরহাটে শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ, যা আগের দিন ৩০ শতাংশ ছিল।
অধিদপ্তর আরও বলছে, ৪ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২২টি জেলা অধিকতর উচ্চ সংক্রমিত। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভের হার ১০-এর সমান বা বেশি।
প্রতি লাখে শনাক্তের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ হাজার জনের বেশি। এছাড়া আরও ২৫টি জেলায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষণীয়। যে ৭টি জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশ বা এর বেশি সেগুলো হলো : রাজশাহী, খুলনা, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার ও ফরিদপুর।
দেশের যে ১৫ জেলায় শনাক্তের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ফেনী, রাজবাড়ী, নড়াইল ও মেহেরপুর।
এছাড়া আরও ২৪টি জেলায় এই সময়ে শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের কম। এগুলো হলো : বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, চাঁদপুর, নওগাঁ, নরসিংদী, বরিশাল, মৌলভীবাজার, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, ঠাকুরগাঁও, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, গাইবান্ধা, শেরপুর, ঝালকাঠি ও নীলফামারী।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ