জানি, বহু দু:খ এবং বেদনা, বহু নির্যাতন এবং নিপীড়ন বহু রক্তক্ষয় এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দিন কেটেছে এবং এখনো অনেক ক্ষেত্রে সেভাবেই তাঁদের দিন কাটাতে হচ্ছে। জানি, আমরা যারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে দু’দিন পর বিজয়ীর বেশে নতুন করে যাত্রা শুরু করবো, তাদের অনেকের প্রিয়জন হারানোর গভীর বেদনাকে কোনদিন ভুলতে পারবো না। যে জীবন আমরা হারিয়েছি, যে সম্মান এবং ইজ্জত আমরা পশুদের হাতে বিসর্জন দিয়েছি, যে সম্পদ আমাদের লুন্ঠিত হয়েছে, জানি সেসব আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই অবক্ষয়, এই অপরিসীম ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি জাতিকে, একটি দেশকে বিশ্বের ইতিহাসে নবজন্ম দান করতে চলেছি। এই মহান গৌরব একান্তভাবেই আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান বংশধরদের। আমাদের পূর্বপুরুষদের এই গৌরব অর্জনের সৌভাগ্য হয়নি। সেদিক থেকে আমরা অনেক ভাগ্যবান। দু:খ আমাদের অনেক হয়েছে, রক্ত এবং জীবন আমাদের প্রচুর দিতে হয়েছে সত্য কিন্তু স্বাধীনতার জন্য এই মৃত্যু এই রক্তদান, এই আত্মত্যাগ সবকিছুর মধ্যেই একটা বিরাট মাহাত্ম্য আছে। সেই মাহাত্ম্যই আমাদের মহীয়ান করে তুলেছে। তার জোরেই ভবিষ্যৎ বংশধরগণ আমাদের ললাটে গৌরবের টিকা দিয়ে বলতে পারবে যে, আমরা আজ দেশের কারণে মরতে শিখেছিলাম বলেই তারা মানুষের মত বাঁচতে পারবে। আমাদের আত্মত্যাগ ও মৃত্যুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বংশধরদের সত্যিকার মানুষের মত বাঁচবার একটি স্থান, একটি পথ আমরা আজ তৈরি করে যাচ্ছি। যে মহৎ কারণের জন্য জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে, অনেক অভাব ও দীনতাকে হাসিমুখে বরণ করে এবং দু:খ-কষ্ট ও দুর্ভোগের সকল ছোবলকে দু’পায়ে দলিত মথিত করে আজ বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন, তার মূল্য মানুষের ভাষায় নির্ণয় করা দু:সাধ্য। এই মহান কারণ ও সংগ্রামের উজ্জ্বলতম আদর্শ শুধু বাংলাদেশের নয়, ভবিষ্যতে সমস্ত বিশ্বের সমাজ গঠনে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। বাঙালী জাতি হিসেবে আমরা যে সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে এই একটি অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সমর্থ হয়েছি, তা কম গৌরবের কথা নয়।…….
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১০৩) চলবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭০
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা