বিএনএ,চট্টগ্রাম: শিবির ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয় বলে জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘শিবির অবশ্যই ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয়; তবে আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। শিবির চায় এদেশে নতুন কোন আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতি, নতুন কোনো আধিপত্যবাদ যেন গ্রাস না করে। যে গ্রাস থেকে অনেক কষ্টের বিনিময়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রায় ২ হাজার শহীদদের রক্তের বিনিময় ফ্যাসিবাদকে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চাই না নতুন কোন ফ্যাসিবাদ, নতুন কোনো আধিপত্যবাদ, নতুন কোন ফ্যাসিজম আমাদের ওপর এসে পড়ুক।’ তিনি বলেন ছাত্রদের ভেতর থেকে ছাত্র রাজনীতির ভয় আগে দূর করতে হবে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে নগরের চকবাজার ডিসি রোড এলাকায় চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের কার্যালয় আরইসরা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। সভায় ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া বিভিন্ন পরামর্শের প্রেক্ষিতে শিবিরের অবস্থান তুলে ধরে এসব কথা জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠান নিয়ে ছাত্রশিবিরের অবস্থানের কথা তুলে ধরে সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ছাত্রদের ভেতরে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে একটা বড় ধরনের কঠিন একটা বিষয় দাঁড় হয়েছে। ছাত্রশিবির চাচ্ছে, এ জায়গায় সাধারণ ছাত্রদের ভেতর থেকে ছাত্র রাজনীতির ভয় দূর করতে। বিগত ১৬ বছর ছাত্রলীগ যেভাবে ছাত্রদের মাঝে রাজনৈতিক নামে দমন পীড়ন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারি চিন্তাচেতনা-মনোভাব ঢুকিয়ে দিয়েছেন; আমরা ছাত্রশিবির চাচ্ছি সে ধরনের কোনো আধিপত্যবাদী না হোক, ওই ধরনের ছাত্র রাজনীতি যাতে না থাকে। সকলেই যাতে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আন্তরিক হয়। এজন্য ছাত্র শিবির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে কখনো কোনো কার্যক্রম রাখে নাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের ঘোষণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণ ছাত্রদের। যেই সাধারণ ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে; সেই তার দায়িত্ব পালন করবে।’
পলিটেকনিক, চট্টগ্রাম কলেজ এবং মহসীন কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ ছাত্ররাই ক্যাম্পাসগুলো পরিচালনা করছে। তবে সেই সাধারণ ছাত্রদের ভেতর অবশ্যই শিবির আছে, ছাত্রদল আছে; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আছে। এককভাবে যে শিবির আধিপত্যবাদী সেটা বিশ্বাস করে না।’
পলিটেকনিক্যাল ইস্যুতে ছাত্রশিবিরকে দোষারোপ করে গণমাধ্যমে হওয়া নিউজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পলিটেকনিক্যাল ইস্যুতে অনেক গণমাধ্যম ছাত্রশিবিরকে দোষারোপ করতে চাচ্ছে। অনুরোধ থাকবে— আপনারা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। শিবিরের কোনো ভূমিকা সেখানে ছিল না। সাধারণ ছাত্রদের ভূমিকায় যেভাবে চেয়েছিল ছাত্রশিবিরও চেয়েছিল সেভাবেই হোক। মূলত ওইখানে হল খোলা নিয়ে গণ্ডগোল। আপনারা (সাংবাদিক) আরেকটু তদন্ত করলে আরো ভালো করে বিষয়গুলো তুলে আনতে পারবেন।’
ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রদের কোনো কষ্টের কারণ হতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত এতটুকুই; সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই থাকবে। কিন্তু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওপেন যেটি আগে ছাত্রলীগ করে আসছে বা রাজনৈতিকভাবে করে আসছে সেটা আমরা করতে চাচ্ছি না। কারণ যতদিন না সাধারণ ছাত্রদের ভেতরে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে; ততদিন এ কার্যক্রমগুলো সাধারণ ছাত্রদেরকে অনেক বেশি কষ্ট দিবে। আমরা চাই না সাধারণ ছাত্রদের কোনো কষ্টের কারণ ছাত্রশিবির হোক। সেজন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা আমাদের একইনীতি অবলম্বন করছি।’
এর আগে, মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন সভাপতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। একদিকে আদর্শিক লড়াইয়ে পরাজিত প্রতিপক্ষের পেশীশক্তির প্রয়োগ অন্যদিকে তথ্য সন্ত্রাসের আঘাতের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে এই দীর্ঘ পথ। এই দীর্ঘ বন্ধুর পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ন্যায্য দাবি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তার সবটুকু সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে অতীতে যেভাবে ছিল, বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও ঠিক একইভাবে থাকবে ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি এদেশের একটি দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সংরক্ষণ ও মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনে ৯০ এর স্বৈরাচার পতন আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে তার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এই দেশ ও জাতির স্বার্থে নিয়োজিত ছিল। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যাকারী স্বৈরাচার খুনি হাসিনা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে।’
লিখিত বক্তব্যে সভাপতি আরো বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী স্বৈরতন্ত্রের নির্মম পরিহাস থেকে রক্ষা পায়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানান অপরাধের নিরব সাক্ষী। পতিত স্বৈরচার জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করতে নানান ষড়যন্ত্রের পায়তারা করে আসছে। চট্টগ্রামেও ইতোমধ্যে কয়েক দফা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পতিত স্বৈরচারের দোসরদের তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যনারে।’
সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পতিত স্বৈরচারের আমলে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার পরিবেশ সংষ্কারে ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সকল ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আমরা আমদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সর্বোত্তমভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে থাকি। যেহেতু এই সংগঠন মানুষ দ্বারা পরিচালিত তাই মাঝেমধ্যে ছোটখাট ত্রুটিবিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক এবং তা সংশোধনযোগ্যও বটে।’
নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মুমিনুল হক, আফিস সম্পাদক খুররম মুরাদ, প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হাসান রিয়াদ ও প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আকাশ প্রমুখ।
বিএনএনিউজ/ নাবতা/এইচমুন্নী