বিএনএ, সাভার : দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধামরাই উপজেলায় প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে গুলি ছোঁড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরের দিকে উপজেলার সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে সুয়াপুর বাজার ব্রিজের পাড়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫জন কর্মী আহত হয়।
নির্বাচনী এসব সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে নৌকার কর্মীসহ কয়েকজনকে আটক করেছে ধামরাই থানা পুলিশ। এরপরও থেমে নেই নৌকার কর্মীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। উপজেলার সূয়াপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ হাফিজুর রহমান সোহরাবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় নৌকার কর্মীরা।
ভুক্তভোগী সোহরাবের ছেলে শিহাব জানান, তার পিতা ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান। এবার স্থানীয় এক বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া লোককে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। দলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সে (সোহরাব) এবার নির্বাচন করবে না বলে মনস্থির করেন। কিন্তু ইউনিয়ন বাসীর আবদার ও অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় কফিল উদ্দিন ও তার কর্মীদের হিংস্রতা। একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আজ সুযোগ সন্ধানী হান্নান তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় তার পিতার উপর।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী সাকিমুদ্দিন বলেন, ‘দুপুরের দিকে আমরা বাজারে কথাবার্তা বলছিলাম। তখনই নৌকার লোকজন এসে ঝামেলা করে। এতে আমাদের চেয়ারম্যানসহ ১০ থেকে ১৫জন আহত হয়েছেন।’ নৌকা প্রতীক পেয়ে ওরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সূয়াপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহরাব অসচেন অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত ফিন্কি দিয়ে বের হচ্ছে। অবস্থা গুরুতর বলে জানান সোহরাবের ছেলে ও কর্তব্যরত চিকিৎসক। সাথে আরও চারজন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে হাফিজুর রহমান সোহরাব, তারা মিয়ার ছেলে সাগর মিয়া ও শাকিমুদ্দিনের ছেলে পলাশ মাহমুদসহ পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হালিম বলেন, ‘দুপুরের দিকে মিছিল নিয়ে ভোট প্রার্থনার জন্য যাবার সময় নৌকার মিছিলে অতর্কিতে হামলা চালায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহরাব হোসেন ও তার কর্মীরা। এসময় সোহরাব তার কোমড় থেকে পিস্তল বের করে আমার কপালে ঠেকিয়ে হুমকি দেয়। একইসঙ্গে পাশে থাকা আরেকজন কোপ দিয়ে আমার দুই আঙুল কেটে ফেলে।’
সুয়াপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি প্রচারণায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় সোহরাবের লোকজন হামলা চালায়। আমার ছেলের আঙ্গুল কেটে ফেলে। এছাড়া দেশীয় অস্ত্রসহ আমার আরো ৮-১০ জন কর্মীকে কোপায় তারা। আহত সবাই ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে।’
নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের কুটিরচর গ্রামের মো: বাবর আলী (৩৫), শিয়ালকুল গ্রামের মো: মমিনুল (৪৬), মো: দেলোয়ার হোসেন (২৮), আব্দুর রাজ্জাক (৪২) ও আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ছেলে সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল হালিমসহ (৪০) আরো ১০-১৫ জন আহত হন।
এবিষয়ে ধামরাই থানার ডিউটি অফিসার এসআই মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মারামারির বিষয়ে লোকজন থানায় এসেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়েশা বেগম বলেন, আমরা ঘটনাটি মৌখিক ভাবে শুনেছি। এখনো কোনো পক্ষ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি৷ তবে পরিস্থিতি সামলাতে সেখানে পুলিশ অবস্থান করছে। কেউ অভিযোগ দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনএ/ ইমরান খান, ওজি