30 C
আবহাওয়া
৬:০৯ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ভূমিহীনদের চাষাবাদের জমি কৃষকলীগ নেতার দখলে

ভূমিহীনদের চাষাবাদের জমি কৃষকলীগ নেতার দখলে

মহানগর কৃষকলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের

বিএনএ,ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে সরকারি আশ্রয় প্রকল্পের মধ্যে বসবাস করা ৪শ ভূমিহীন পরিবারের চাষাবাদের জমি বেদখলের অভিযোগ উঠেছে মহানগর কৃষকলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে। জমিতে গেলে ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মানুষকে দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকী। নেতার ভয়ে আতংকিত ভূমিহীনরা চান প্রশাসনের সহযোগিতা।

২০০৩ সালে ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রীজ সংলগ্ন বলাশপুর আবাসন প্রকল্পে ৪শ ভূমিহীন পরিবারকে আশ্রয়ের জন্য ঘর বেধে দেন সরকার। এসময় তাদের চাষাবাদের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ৩৫ একর জমি মৌখিক অনুমতি দেন। তখন জমিটি শতশত কৃষক চাষাবাদের উপযুক্ত করার জন্য এক বছর পরিশ্রম করেন। তারা সেখানে ধানের পাশাপাশি সবজি চাষ করে আসছিলেন। সম্প্রতি জমিটিতে মহানগর কৃষকলীগ নেতা আলমগীর হোসেন পুকুর তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন। ভূমিহীনদের সেখানে যেতে নিষেধ করেছেন। তারা জমিতে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাদের উপর চালানো হয় হামলা। দেয়া হয় প্রাণ নাশের হুমকী। এমতাবস্থায় আতংক বিরাজ করছে আবাসন পল্লীতে।

বলাশপুর আবাসন পূর্ব-১ এর সভাপতি আব্দুল মোতালেব বলেন, ২০০৩ সাল থেকে সরকারের আবাসন প্রকল্পে দেয়া ঘরে বসবাস করে আসছেন। একই সাথে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ৬ মাস ধান ও সবজি চাষ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নেন। দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসলেও তাদের কেউ বাধা দেয়নি। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা হয়েছে। পাড়ে অনেক বালু তোলা হয়েছে। তাই এক বছর তারা কোন ফসল উৎপাদন করতে পারেনি।

গেল কয়েকদিন ধরে চরের একটা অংশে কৃষকলীগ নেতা আলমীর পুকুর খনন করছেন। সেখানে ভূমিহীনদের যেতে নিষেধ করেছেন। এখন পুরো জমিটিই তার দখলে থাকবে বলে জানিয়েছেন। জমিতে কেউ গেলে এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে প্রাণ নাশের হুমকী দেয়া হয়।

আবাসনে বসবাস করা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আবাসন পল্লীতে বসবাস করছেন। একেক পরিবারের ৪ থেকে ৫ জন সদস্য। তারা সকলেই নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ রিকশা, ভ্যান চালানোর পাশাপাশি দিনমুজুরের কাজ করে। অনেকেই ১০ টাকার সবজি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই তারা নদের পাড়ে সবজি চাষ করতো, কিন্তু নেতা জমি বেদখল দেয়ায় তা আর করা সম্ভব হচ্ছে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেও সমস্যা। আমরা এখন নিরুপায় হয়ে পড়ছি।

চীন-মৈত্রী সেতু থেকে রেলব্রীজ পর্যন্ত ৩৫ একর জমি শুরু থেকেই চাষাবাদ করছেন বলে দাবি করে আবাসনে বসবাস করা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনে আমরা রক্ত দিব তাও কোন নেতাকে জমি দখল করতে দেয়া হবে না। আমাদের প্রাণ নাশের হুমকী দেয়া হচ্ছে, তাই আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি। এখন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হবে।

মহানগর কৃষকলীগের কুঠির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, তাদের জায়গা আমি দখল করেনি। গত ৯ বছর ধরে নদীতে কাটা দিয়ে মাছ ধরে আসছিলাম। এবার ওয়ার্ড কৃষকলীগের কমিটিতে তাদের পদ না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, কৃষকলীগ নেতা এবং স্থানীয়দের মধ্যে নানা বিষয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় ভূমিহীনরা অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মহানগর কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেম রায়হান বলেন, কৃষকলীগের নাম ব্যবহার করে কারো জমি দখল করার সুযোগ নেই। সে যে কেউ হোক না কেন। বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে কোথাও ভুল হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

জেলা প্রশাসক এনামূল হক বলেন, সরকারি জমি কারো বেদখল দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনএ/ হামিমুর রহমান,ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ