27 C
আবহাওয়া
৮:৪৯ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেমন ছিলো ২০২১ সালের আদালত পাড়া (প্রথম পর্ব)

কেমন ছিলো ২০২১ সালের আদালত পাড়া (প্রথম পর্ব)

কেমন ছিলো ২০২১ সালের আদালত পাড়া (প্রথম পর্ব)

বিএনএ, (আদালত প্রতিবেদক) ঢাকা:
।।সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।।

“সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না” এমন বাণী চিরন্তনের পথ ধরে শেষ হতে চললো আরও একটি বছর।দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। ঘটনা-দুর্ঘটনায় নানান বিষ্ময় ছিলো ২০২১ সাল জুড়ে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির থাবা বসিয়ে দিয়ে গেছে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। এর মাঝেই দেশের আইন-আদালতে সবার দৃষ্টি ছিলো বিশেষ ভাবে।

২০২১ সালে শেষ হয়েছে কিছু উল্লেখ যোগ্য মামলার বিচার। আবার বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের অপরাধ কর্মকাণ্ড ও হত্যা দুর্নীতির কারণে আদালতপাড়া ছিলো সরগরম। প্রথম পর্বে থাকছে ২০২১ সালের কিছু আলোচিত মামলার রায়।

বছর জুড়ে আলোচিত রায় গুলোর মধ্যে

কাকরাইলে জোড়া খুন, ব্লগার দীপন হত্যা, ব্লগার অভিজিৎ হত্যা, জুলহাজ-তনয় হত্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ঋণ জালিয়াতি ও বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যা: স্বামীসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

রাজধানীর কাকরাইলে মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা মামলায় গত ১৭ জানুয়ারি নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিমসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন— করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল-আমিন ওরফে জনি।

২০১৭ সালের ১ নভেম্বর কাকরাইলের পাইওনিয়র গলির একটি বাসায় আবদুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আলী হোসেন।

প্রকাশক দীপন হত্যা: ৮ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) আট সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে খুন হন ফয়সাল আরেফিন দীপন। সেদিন বিকেলেই তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুর রহমান আটজন আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

অভিজিৎ হত্যা: ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) পাঁচ সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান। এছাড়া এবিটির আরেক সদস্য শফিউর রহমান ফারাবির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

এই মামলায় ১১ এপ্রিল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। ১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। মামলায় ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ২৮ জন সাক্ষ্য দেন।

প্রধানমন্ত্রীর অবতরণস্থলে বোমা: ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় হেলিকপ্টার অবতরণের স্থানে বোমা পুতে রাখার অভিযোগে করা মামলায় গত ২৩ মার্চ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজের মাঠে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমা উদ্ধার হওয়ার ওই স্থানেই ২২ জুলাই বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার। এ ঘটনায় কোটালিপাড়া থানার উপপরিদর্শক নূর হোসেন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন।

২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন সিআইডির এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ মুফতি হান্নানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার চলাকালে আদালত মোট ৫০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেন।

জুলহাজ-তনয় হত্যা: মেজর জিয়াসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু লোকনাট্যদলের শিশু সংগঠন পিপলস থিয়েটারের কর্মী মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় গত ৩১ আগস্ট চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল জিয়াসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ১২ মে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম। মামলায় বিভিন্ন সময় আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্য নেন।

স্বাস্থ্যের সেই মালেককে ভোগ করতে হবে ১৫ বছরের সাজা

অস্ত্র আইনে করা মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে বাদলের ২০ সেপ্টেম্বর ১৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম। রায়ে অস্ত্র আইনের এক ধারায় ১৫ বছর ও আরেক ধারায় তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন।

গত ১১ জানুয়ারি অস্ত্র আইনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান চৌধুরী ১৩ জনকে সাক্ষী করে মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলার অভিযোগপত্র নেন। গত ৪ এপ্রিল মালেকের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড

ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে গত ৯ নভেম্বর ১১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। এছাড়া এস কে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় সাক্ষ্য দেন ২১ জন।

আবরার হত্যায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় গত ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জন সাক্ষ্য শেষ করা হয়।

৬ শিক্ষার্থী হত্যা: ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন

দশ বছর আগে শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার মামলায় গত ২ ডিসেম্বর ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহান। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাব সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই বছরের ৮ জুলাই মামলার ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলালউদ্দিন। মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্য শেষে এ রায় দেওয়া হয়।

বিএনএনিউজ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ