বিএনএ, ডেস্ক : ত্রাণ নিতে যাওয়া অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের গুলিতে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। এবার ভয়ংকর অভিযোগ উঠেছে গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। ত্রাণের প্যাকেটে মিলতেছে আফিম।
অবরুদ্ধ গাজায় শিশুর কান্না, মায়ের দীর্ঘশ্বাস, আর ধ্বংসস্তূপের ভেতর খুঁজে পাওয়া বেঁচে থাকার সামান্যতম সম্ভাবনাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আর ঠিক এই সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী মানুষ মানবিক সহানুভূতি নিয়ে গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবছে, তখনই উঠে আসছে এক ভয়ঙ্কর ও অমানবিক অভিযোগ। ত্রাণ প্যাকেটের ভেতর মাদকদ্রব্য, বিশেষ করে আফিম জাতীয় নেশাজাত দ্রব্য বিতরণ করা হচ্ছে। মূলত ফিলিস্তিনি তরুণদের টার্গেট করে আফিম দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা এর প্রতি আসক্তি হয়ে বিপথে যায়।
মিডল ইস্ট আই-য়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত ‘বিতর্কিত’ ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে বিতরণ করা আটার বস্তায় আফিমজাত মেডিসিন অক্সিকোডন ট্যাবলেট পাওয়া গেছে।
অক্সিকোডন একটি অপিওয়েড (আফিমজাতীয় ওষুধ), যা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা উপশমের কাজ করে। সাধারণত ক্যানসার রোগীদের এই ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়। এই ওষুধটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা ও দৃষ্টিবিভ্রমসহ প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলতে পারে।
একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ত্রাণের আটার বস্তায় অক্সিকোডন ট্যাবলেট পাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে বিবৃতি দেয় গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি, যারা এই ট্যাবলেটগুলো আটার বস্তার ভেতর পেয়েছেন। সম্ভবত এই মাদকদ্রব্যগুলোর কিছু অংশকে গুঁড়ো করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটার মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আরও বলেছে, দখলদার ইসরায়েলিরা ‘আসক্তি ছড়ানো এবং ফিলিস্তিনিদের ভেতর থেকে সামাজিক বুনন ধ্বংস করার এই জঘন্য অপরাধের জন্য ইসরাইলকে পুরোপুরি দায়ী বলে মনে করে।
ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মরণ ফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ‘অবরোধের অপব্যবহারকে’ ‘সহায়তা ও সহায়তা’ হিসেবেও নিন্দা জানিয়েছে দেশটির কার্যালয়।
ইসরায়েল বহুদিন ধরেই গাজাকে কেবল সামরিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিক ও মানসিকভাবেও ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে আসছে। ত্রাণের মাধ্যমে আফিম ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল আসলে একটি পরোক্ষ “জেনোসাইড”— যেখানে গোলা-বোমার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় মাদক, মানসিক অবসাদ ও মূল্যবোধহীনতা।
ফিলিস্তিনি ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এই আফিম উদ্ধারকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে ঘৃণ্য রূপ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
গাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা ফেসবুকে এই ওষুধ সম্পর্কে পোস্ট করে বলেছেন, ‘এটি আমাদের সামাজিক চেতনা নিশ্চিহ্ন করার একটি মাধ্যম।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবিক সহায়তা’ বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে সমর্থন করে, অন্যদিকে আর্ত-মানবতার কথা বলে ত্রাণ পাঠায়। এই দ্বিচারিতা এখন আর গোপন নেই। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল দমনপীড়ন বেড়েছে কয়েক গুণ।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, জিএইচএফ’র কার্যক্রম চলাকালে গত এক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে অন্তত ৫১৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
২৭ জুন শুক্রবার ইসরায়েলের পত্রিকা হারেৎজ জানায়, ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছেন যে, তারা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছেন।
গাজার সাহসী জনগণকে এখন শুধু সামরিক আগ্রাসন নয়, মানসিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও লড়ে যেতে হচ্ছে। তাদের সন্তানদের, তরুণদের এ মরণ উপহার থেকে রক্ষা করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
কোন ধরণের বাধা ছাড়া গাজায় প্রতিদিন বোমা ফেলছে ইসরায়েল। গাজা এখন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মানবতার পরীক্ষার জায়গা। যদি বিশ্ববাসী আজ নীরব থাকে, তবে কাল হয়তো মানবতা হারিয়ে যাবে।
সৈয়দ সাকিব