বিএনএ ডেস্ক : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটার পর একটা কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। এবার বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে তিন মাসে তিন দফায় বিধিনিষেধ আরোপ করল ভারত।
২৭ জুন শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে। স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা এসব বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড়। তবে বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে একটি পথ খোলা রেখেছে ভারত।
এটি বাংলাদেশের পাট শিল্পের জন্য একটি ধাক্কা হিসেবে দেখছেন এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এই ৯ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ১৪ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এসব পণ্যের ৯৯ শতাংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়।
শুক্রবারের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে ওই ৯ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছিল। গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল দেশটি।
ভারতের এসব সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু অর্থনৈতিকই নয়, কূটনৈতিকভাবেও ভারতের একটি চাপ তৈরির কৌশল।
এমন এক সময় ভারত এ নিষেধাজ্ঞা দিলো যখন বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভারত বিরোধী জোট করছে না বাংলাদেশ।
১৯ জুন কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় জোট গঠনের বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান নিয়ে ত্রিপক্ষীয় জোট গঠন হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা কোনো জোট গঠন করছি না। মূলত উদ্যোগটি চীনের এবং এটি একেবারেই অফিশিয়াল পর্যায়ে, এটা রাজনৈতিক কোনো পর্যায়ে না।’
ভারতের সাম্প্রতিক এই তিন দফা নিষেধাজ্ঞা শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জটিলতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। একটি সময় যেসব সম্পর্ক ‘ঐতিহাসিক’ বলে প্রচারিত হতো, এখন তা কার্যত একপাক্ষিক আচরণে ভরে উঠছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এখন সময় বিকল্প বাণিজ্য পথ, কৌশলগত অংশীদার ও কূটনৈতিক কণ্ঠস্বর জোরদার করার।
ভারতের একটার পর একটা এমন কঠোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের জনগণও। ভারতের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক স্বার্থে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন জরুরী। নাহলে দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কূটনৈতিকভাবে সমস্যাগুলো সমাধানে জোর দিচ্ছেন তারা।
বিএনএ/ ওজি