বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : ইউক্রেন সীমান্তে আটকে পড়া শত শত ভারতীয় ছাত্রছাত্রী সে দেশের সেনা ও নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুমুল হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী টুইটারে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। যে ভিডিওতে দেখা গেছে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্তে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সীমান্ত পেরোতে না-দিয়ে মারধর করা হচ্ছে।
সেখানে মেয়েদের পর্যন্ত চুলের মুঠি ধরে টানা হচ্ছে এবং রড দিয়ে পেটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সীমান্তে কীরকম দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে তাদের পড়তে হচ্ছে, তা বর্ণনা করে গত আটচল্লিশ ঘন্টায় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা অজস্র ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছেন।
কেরালার মেয়ে অ্যাঞ্জেল, যিনি ইউক্রেনের একটি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, রবিবার ভোররাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে শেহায়নি-তে শত শত ভারতীয় ছাত্রকে সীমান্ত পেরোতে বাধা দিচ্ছে ইউক্রেনের পুলিশ ও সেনারা।
তাদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে, রাস্তায় ফেলে পর্যন্ত মারা হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য করে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ভয় দেখাতে শূন্যে গুলি পর্যন্ত চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী – যে বার্তা ভারতে হুলুস্থূল ফেলে দেয়।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও – যেখানে সীমান্ত পোস্টের মতো দেখতে একটি জায়গায় সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীদের স্যুটকেস নিয়ে আসা নিরীহ লোকজনকে লাথি মারতে দেখা যায়।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, “আমরা আমাদের নিজেদের লোকদের এই অবস্থায় ফেলে দিতে পারি না।”
কমল ভোরা নামে আর একজন ছাত্রী ফেসবুকে জানিয়েছেন, রোমানিয়া সীমান্তেও সে দেশের সেনা তার বন্ধুদের মারধর করছে, তাদের সঙ্গে অসভ্যতা করা হয়েছে – এমন ভিডিও তিনি হাতে পেয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ভারত বিমান পাঠিয়ে বা সেনা পাঠিয়ে যে কোনওভাবে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাক, সরকারের কাছে এই আবেদন জানান তিনি।
পাঞ্জাবের একজন ছাত্র গুরদীপ সিং জানান, নাইজেরিয়া বা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের ছাত্রদের সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হলেও শুধু ভারতীয়দেরই আটকানো হচ্ছে।
পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে ভারতীয়দের যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও।
শ্রিংলা রবিবার রাতে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তিনি নির্দিষ্ট করে এই বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, “টেলিফোনে সরাসরি সীমান্তে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ইউক্রেন দূতাবাস বিষয়টির সুরাহা করবেন বলেও কথা দিয়েছেন।”
এদিকে ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনতে দিল্লি ‘অপারেশন গঙ্গা’ নামে অভিযান শুরু করেছে, তার আওতায় চারজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী আজ ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী চারটি দেশ – পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার পথে রওনা দিয়েছেন।
তারা নিজেরা সীমান্তে দাঁড়িয়ে উদ্ধার অভিযানের তদারকি করলে ভারতীয় নাগরিকদের হেনস্থা অনেক কমবে বলে সরকার আশা করছে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।