31 C
আবহাওয়া
১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৮

কারাগারের রোজনামচা

রফিক আমার বহুদিনের সহকর্মী । কলিকাতা থেকেই একসাথে রাজনীতি করেছি তবে মাঝে অনেকবার এদিক ওদিক করেছে । সেই জন্য সহকর্মীদের মধ্যে অনেকে ওকে বিশ্বাস করতে চায় না । এবার যখন আবার আওয়ামী লীগে ফিরে এল তখন সত্যই ওকে আমি বিশ্বাস করেছি, কারণ এখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাবার কোনো সম্ভাবনা নাই । কোনোদিন ওকে কেহ গ্রেপ্তার করতে পারে নাই । ১৯৪৯, ১৯৫২, ১৯৫৪ প্রত্যেক বারেই রফিক কেটে পড়েছে। তাই মনে মনে বললাম, ‘বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান?’ এবার যে সে ভাগতে চেষ্টা করে নাই, তার প্রমাণও পেয়েছি। সভা সমিতিতে যেয়ে জোর বক্তৃতা করেছে আমাদের গ্রেপ্তারের পরেও । মনে হয় আওয়ামী লীগের কাকেও আর বাইরে রাখবে না বোধ হয় এখনও অনেককে ধরতে চেষ্টা করছে । কেউ কেউ বোধ হয় আত্মগোপন করে কাজ চালাইয়া যেতেছে ।

মানিক ভাইয়ের কাছেই রেখেছে রফিককে ভালই হয়েছে একজন সাথী পেয়েছেন যারা ১০ সেলে আছে তারা মানিক ভাইকে সমীহ করে চলে । নিশ্চয়ই দূরে দূরে থাকতে চেষ্টা করবে ।

ন্যাপ দলীয় মশিউর রহমান আইন পরিষদে যাহা বলিয়াছেন তাহাতে কোনো লোক আশ্চর্য না হয়ে পারবে না । সরকারি দলের সমর্থকরা যাহা বলিয়াছেন তিনি সেই কথাগুলি আরও জোরে জোরে বলিয়াছেন তিনি তাদের সুরে সুর মিলাইয়া বলিয়াছেন যে, ‘পূর্ব পাকিস্তানে গোলমাল সৃষ্টি করার জন্য মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইএ) অর্থ প্রদান করিয়াছে ।’ ‘গত সপ্তাহে প্রদেশে যে ধর্মঘট হইয়াছে তাহাতে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের অর্থ সাহায্য দেওয়া হইয়াছে বলিয়া তিনি জানান।’ এরা আবার প্রগতির কথা বলে! পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি, রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি, শ্রমিক ও কৃষকদের দাবি আজ নূতন নয় তিনি যখন ১৯৪৭-৫৭ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন, প্রত্যেকটা গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য রংপুরে গুন্ডা লেলাইয়া দিতেন বাংলা ভাষার আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য নিজে কর্মী ও ছাত্রদের উপর গুন্ডামি করার চেষ্টা করেছেন ১৯৫৪ সালের মুসলিম লীগের টিকিট নিয়ে যখন জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তখন ১৯৫৬ সালে পৃথক নির্বাচন সমর্থন করে মুসলিম লীগের ঝান্ডা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন ।

সারাজীবন দালালির রাজনীতি করে বেড়াইয়াছেন, আবার রাতারাতি ১৯৫৭ সালে ‘প্রগতিবাদী’ হয়ে ন্যাপে যোগ দিয়াছেন আর যারা এই স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের আন্দোলনের জন্য সারাজীবন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে এবং মামলার আসামি বা রাজবন্দি হিসেবে বৎসরের পর বৎসর কারাগারে কাটাইয়াছে, তাদের সম্বন্ধে এই সমস্ত নীচ কথা উচ্চারণ করা তার পক্ষেই সম্ভবপর। সরকারের সাথে গোপনে পরামর্শ করে যে লোক জাতীয় পরিষদের সদস্য হয়, রাওয়ালপিন্ডি আর করাচী ঘুরে পারমিটের ব্যবসা করে বেড়ায়, তাহার কাছে একটা সংগ্রামী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে এবং জনগণের গণআন্দোলন সম্বন্ধে এই সব কথা শোভা পায় কিনা জনগণ বিচার করবে ।

সূত্র : কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৯৮-৯৯, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

আরও পড়ুন :

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬১
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৬০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ