বিএনএ,ডেস্ক :পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গত ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশানে দুইজন জুলাই যোদ্ধা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে এক দফায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে আসে।
শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ কয়েকজনকে সঙ্গে করে শাম্মীর বাসায় আবারও হানা দেয়। তারা শাম্মী আহমেদের স্বামীর কাছে আরও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
বিষয়টি পুলিশকে জানালে গুলশান থানা পুলিশ এসে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ ৫জন জুলাই যোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। আটক অন্য ৪জন হলেন- মো. সিয়াম, সাদমান সাদাব, আমিনুল ইসলাম ও ইব্রাহীম হোসেন। গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে এনসিপি শীর্ষ নেতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, আটক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, গত ১৭ জুলাই আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় যান তাকে ধরতে। তখন শাম্মীর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। ওইদিন তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। শনিবার ফের চাঁদার টাকা আনতে গেলে ভুক্তভোগী পরিবার থানায় ফোন করে সহযোগিতা চান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে আসে।
৫ জনকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানায় নিয়ে আসার পর তাদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে একটি ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা
এই ঘটনার পর গত ২৮ জুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখপাত্র পদ থেকে পদত্যাগ করা উমামা ফাতেমা তার ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ৫ জনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এতটাই আশ্চর্যান্বিত হওয়ার অভিনয় করছেন যে, আমার মনে হচ্ছে আমিই সবথেকে কম আশ্চর্য হয়েছি।
এই ছেলেগুলাকে তো নেতাদের পেছনে প্রটোকল দিতে দেখা গেছে এতদিন যাবৎ। সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘ্নে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গুলশান বনানী গ্যাং কালচারের অজস্র অভিযোগ আভ্যন্তরীনভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল।
পোস্টে উমামা ফাতেমা আরও জানান, এই ছবির রিয়াদ নামের ছেলেটা গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ন টাওয়ারে আমার সামনে অত্যন্ত উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর পাল্টা চড়াও হয়। ঐ ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আমি জেনে তখন মোটেও অবাক হইনি, কারণ ততদিনে বৈষম্যবিরোধীতে এই ধরনের মানুষজনের আনাগোনাই সর্বত্র টের পাওয়া যেত। ঠিকই তারা রূপায়ন টাওয়ারে অবাধে আসা যাওয়া করত।
উমামা লিখেন, কারো দুর্নীতি বা অসততার ব্যাপারে অভিযোগ জানালে উত্তরে পিনড্রপ সাইলেন্স উপহার পেতে হবে। আর আমি চোখের সামনে দেখতাম এসব লোকজনই কিভাবে দিনশেষে এক্সেস করে নেয়। আজকে এতমাস পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে বলার কোনো ভাষা পাইনা। যে যেভাবে পারছে এই প্ল্যাটফর্মকে নষ্ট করছে।
আজকের এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মূখপাত্র বিস্ময়ের সঙ্গে লিখেন, ইশ! মানুষ কত নিঃষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন এই ছেলেগুলো আজ কিভাবে চাঁদাবাজি করল! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবে এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী