বিএনএ, বিশ্বডেস্ক: দুর্নীতি মামলায় সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। বুধবার (২৭ এপ্রিল) সুচির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১১টি দুর্নীতির অভিযোগের প্রথম মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ মাধ্যম জানায়, সুচির বিরুদ্ধে ১৮টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে আদালতে। এসব দোষ প্রমাণিত হলে তাকে প্রায় ১৯০ বছরের সম্মিলিত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
ইয়াংগুনের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফিও মিন থেইনের কাছ থেকে ৬ লাখ ডলার এবং ১১.৪ কেজি স্বর্ণ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সু চির বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। যদিও এ অভিযোগকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এ নেত্রী।
এর আগে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উসকানি দেয়া এবং করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ ভঙ্গের অভিযোগে এক মামলায় গত ডিসেম্বরে সুচি’র চার বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে তা কমিয়ে দুই বছর করা হয়।
আর অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি এবং ব্যবহারের আরেক মামলায় জানুয়ারিতে তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
সবগুলো মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হলে ১০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রীর। বিচার শেষ হতেই লাগতে পারে কয়েক বছর।
বিচার ও সাজা পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে পরিচিত মুখটির রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় সামরিক জান্তার বিশেষ আদালতে সুচির রুদ্ধদ্বার বিচার হচ্ছে। গণমাধ্যমকে এই বিচার প্রক্রিয়ার খবর জানানো হচ্ছে না এবং সু চির আইনজীবীদেরও সংবাদ মাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না।
গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুচি’র নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেদিনই সুচি ও তার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সুচিকে তখন থেকেই বন্দি করে রাখা হয়েছে। মামলার বিচার চলার সময় তাকে কয়েদীর পোশাক হিসেবে সাদা জামা এবং বাদামি লুঙ্গিতেও আদালতে হাজির করতে দেখা গেছে।
সামরিক শাসনের বিরোধিতা করায় সু চি ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বহু বছর গৃহবন্দি ছিলেন। ওই বছর মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি বড় ধরনের জয় পায়।
২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে তার দল ফের জয় পায়। এর কয়েক সপ্তাহ পর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে।
ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অশান্তি চলছে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়। সেই বিক্ষোভ দমাতে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মাত্রা আরেক দফা বাড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় রাজনৈতিক কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ গণতন্ত্রপন্থি ১০ হাজারের বেশি মানুষকে।
বিএনএ/এমএফ