বিএনএ, ডেস্ক: ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফান (রা.) ছিলেন ধনী ও দানশীল ব্যক্তি। জীবদ্দশায় তিনি মানবকল্যাণে বহু সম্পদ দান ও ওয়াকফ করেন। তাঁর সেসব দান ও ওয়াকফকৃত সম্পদ দ্বারা এখনো উপকৃত হচ্ছে। মহানবীর (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছরে মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে খাবার পানির সংকটে পড়ে।
মদিনায় ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ নামে ইহুদির একটি কূপ ছিল। ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করল।অচেনা পরিবেশে সুপেয় পানির তীব্র সংকটের সময় সাহাবারা রাসুলকে (সা.) এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দিবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।’
রাসুল(সা.) এর কথায় হযরত ওসমান (রা.) ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ইহুদি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি বললেন, পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি আর আরেক দিন হবেন আপনি।
ওসমান (রা.) অর্ধেক কূপ কেনার পর বিনামূল্যে পানি বিতরণ শুরু করেন, লোকজন ওসমান (রা.) ক্রয় করা নির্ধারিত দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ করে রাখত। ইহুদিরা দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। এতে ইহুদির পানির ব্যবসা বন্ধ হলো এবং তিনি পুরো কূপ বিক্রি করে দিলেন। ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে ওসমান (রা.) পুরো কূপের মালিকানা লাভ করেন এবং তা থেকে মুসলমানরা বিনামূল্যেই পানি নিত। পরে সর্বসাধারণের পানি পানের জন্য ওয়াকফ করে দেন।
এ সময় এক ধনী লোক ওসমান (রা.) থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। লোকটি মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। ওসমান (রা.) জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও বেশি বলতে লাগলেন। শেষে ধনী লোকটি বলল, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছে? ওসমান (রা.) জবাবে বলেন, আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
হযরত ওসমানের (রা.) শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু উত্থান-পতনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১৫৫০টিতে পৌঁছায়। সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়। এই ভূসম্পত্তি ওসমানের (রা.) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, সৌদি আরবে এখনও তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমানের (রা.) নামে দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। আরও মজার বিষয় হল- মাস ফুরালে এখনও তার নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ওসমানের (রা.) মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের কাজ!
সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ ওসমানের (রা.) অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি ক্রয় করা হয়েছে। যেখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার। যার নেমপ্লেটে লেখা আছে ‘মালিক সাইয়্যিদুনা উসমান (রা.)। যেহেতু তার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থে এটি নির্মিত, তাই মালিক হিসেবে তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে।
হোটেলের আয়ও ওসমান (রা.)-এর অন্য সম্পদের মতো একভাগ এতিম-মিসকিনদের দান করা হয় এবং আরেকভাগ তার নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। এই অর্থের অর্ধেক অসহায়-দুঃস্থদের মানবতার সেবায় ব্যয় করা হয় আর অর্ধেক হযরত ওসমানের (রা.) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ওসমান(রা.) এর দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। ওসমান (রা.) আখেরাতের অ্যাকাউন্টে তো সওয়াব জমা হচ্ছেই দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যলেন্সও ফুরাবার নয়।
বিএনএনিউজ/ বিএম/হাসনা
