নিউইয়র্ক সিটি: জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ মুসলিম দেশগুলোকে “১৩ শতক থেকে একবিংশ শতাব্দীতে” আধুনিকীকরণ এবং তালেবানদের ওপর ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আমিনা মোহাম্মদ আফগানিস্তানে দুই সপ্তাহের সরকারি সফর শেষে নিউইয়র্ক পৌঁছে আরব নিউজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে উপরোক্ত আহবান জানান।
তিনি বলেন, তালেবান কর্মকর্তাদের ষষ্ঠ শ্রেণির বাইরে আফগান নারী ও মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ না দেয়ার এবং মানবিক সংস্থায় কাজ করা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনার জন্য বলেছি।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার মহিলা কর্মকর্তা, ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ আরব নিউজকে বলেন তালেবান সরকার, যারা এখনও অন্য কোন দেশ দ্বারা স্বীকৃত নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কামনা করে এবং জাতিসংঘে আফগানিস্তানের আসন গ্রহণ করতে চায়।
কর্মক্ষেত্রে তালেবানরা নারীদের পিছিয়ে দিচ্ছে
২০ বছরের গৃহযুদ্ধের শেষে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের পর তালেবান যোদ্ধারা ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
তালেবানদের সর্বজনীন নীতির দিকে চালিত করার জন্য যা কিছু সুবিধা পাওয়া যায় তা সর্বাধিক করা গুরুত্বপূর্ণ, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের উপর ভিত্তি করে।
শরীয়ত বা মুসলিম দেশের কথা বলে নারী ও মেয়েদের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা থেকে দেশটিকে বিরত থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে তালেবানরা নারীদের পিছিয়ে দিচ্ছে।
আফগানরা হানাফী মাযহাব, আমি মালেকি মাযহাব এবং উভয়ই সঠিক
আমিনা মোহাম্মদ বলেন, যে তিনি আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করার জন্য তার কূটনৈতিক “টুলবক্সে” যা কিছু ছিল তা ব্যবহার করেছেন।
“তাদের মধ্যে একটি (উপকরণ) ছিল তাদের বলা যে আমি, তাদের মতো, একজন সুন্নি মুসলিম,” তিনি বলেছিলেন। “তারা হানাফী মাযহাব, আমি মালেকি মাযহাব এবং উভয়ই সঠিক।
কাবুল ভ্রমনের আগে, আমিনা মোহাম্মদের নেতৃত্বে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং সৌদি আরব সহ অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পরিদর্শন করেন, যেখানে নারী অধিকারের ওপর তালেবান হামলার ব্যাপক বিরোধিতা রয়েছে।
“যতবার আমি এই মুসলিম দেশগুলির একটিতে গিয়েছি, তারা এই সত্যটিকে আরও শক্তিশালী করেছে যে ইসলাম নারীদের শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করেনি,” তিনি বলেন।
আমিনা মোহাম্মদ কান্দাহারে তালেবান কর্মকর্তাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীদের অধিকারের বিষয়ে সৌদি আরবের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু তালেবান নেতারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সৌদিআরব আর আফগানিস্তান এক নয়”।
ইসলাম নারী শিক্ষার বিরোধী নয়
“সুতরাং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে মুসলিম দেশগুলির একত্রিত হয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে, ইসলাম নারী শিক্ষার বিরোধী নয় ” তিনি বলেছিলেন। “এটা কঠিন কাজ আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে; ইসলামে আমাদের কোনো পোপ নেই, আমাদের একটি কোরআন আছে এবং আমাদের বিভিন্ন চিন্তাধারা আছে – কিন্তু ইসলামে আমাদের নারীদের অধিকার স্বীকৃত।
“আমি তালেবানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে, ইসলামের সর্বশেষ নবী (সা.) প্রথম স্ত্রী খাদিজা(রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন যিনি ইসলামের খেদমতে অর্থায়ন করেছিলেন। কনিষ্ঠ স্ত্রী, আয়েশা(রা.)ও জ্ঞান চর্চা ও বিতরণ করতেন।
ইসলাম একটি জীবন্ত ধর্ম
“‘ইকরা’ (পড়ুন) কোরানের প্রথম শব্দ এবং (ইসলাম) হল আলোর ধর্ম। এটি একটি জীবন্ত ধর্ম এবং আমি মনে করি যে ১৩ শতক থেকে একবিংশ শতাব্দীতে তালেবানদের কিভাবে উন্নীত করা যায় তা নিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে ভাবতে হবে। এটি রাতারাতি হবে না।
আমিনা মোহাম্মদ আরব নিউজের সাংবাদিককে বলেন, এটি প্রস্তাব করা হয়েছে যে জাতিসংঘ এবং ৫৭-সদস্যের অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন মার্চ মাসে মুসলিম বিশ্বের নারীদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের যৌথ আয়োজক। তিনি বলেন, তিনি ওআইসি প্রতিনিধি দলে আরও নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, নারী অধিকারের বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোর একত্র হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। “আমাদের ইসলামের মধ্যে মধ্যপন্থীদের সাথে আরও বেশি কথা বলতে হবে এর অর্থ শুধু আফগানিস্তানের জন্য নয় বরং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলির জন্য প্রযোজ্য হতে পারে যেমন-ইরান বা ইয়েমেন।
আরব নিউজ অনলাইন অবলম্বনে-সৈয়দ গোলাম নবী