27 C
আবহাওয়া
১০:১৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ৭, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » দলীয় উপদেষ্টাদের তালিকা ফাঁস!

দলীয় উপদেষ্টাদের তালিকা ফাঁস!


বিএনএ, ঢাকা : দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত। এই অবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদেও  রয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা। যা এর আগে দেখা যায়নি। বিস্ফোরক এই পরিস্থিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সৌদি আরব সফর বাতিল করেছেন—এমন গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

YouTube player

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের বাকি মাত্র সাড়ে ৩ মাস। কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া।

বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দিতে চায় দলটি।

গত ২২ অক্টোবর  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। গত ২২ অক্টোবরের বৈঠকে দলটি অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সেই বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে তারা।  তারা হলেন, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান,  মন্ত্রী পরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী।

বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পরদিন ২৩ শে অক্টোবর  জামায়াত ইসলামী যমুনায় যায়। ওই সময় শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলার , যাঁরা  বিএনপির হয়ে কাজ করছেন।

বৈঠকে জামায়াত ইসলামী কয়েকজন উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এরা হচ্ছে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।  তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।

এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। শাপলা প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করছে না। নির্বাচন কমিশন  একটি দলের পক্ষে কাজ করছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি বেশ কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই তালিকায় আছেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, অর্থ উপদেষ্টা  সালেহ উদ্দিন, এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

প্রসঙ্গত, জামায়াত ইসলামী  ও এনসিপি উভয় তালিকায় আছে শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনের সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা যাকে অভিভাবক বলে পরিচয় দিতেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক আসিফ নজরুলের নাম। বিষয়টি সবাইকে বিস্মিত করেছে।

এছাড়া পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নৌ  উপদেষ্টা  সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগ ঘরানার বলে প্রচার রয়েছে।

তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।“

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি।  কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন,—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’

রাজনৈতিক দলগুলোর এমন পরস্পর বিরোধী অবস্থান এবং  রাজনৈতিক টানাপোড়েনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কীনা  তা নিয়ে জনমনে সংশয় সন্দেহ রয়েছে।

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ