23 C
আবহাওয়া
১২:৩৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ফেব্রুয়ারির পর কার দখলে থাকবে সেন্টমার্টিন?

ফেব্রুয়ারির পর কার দখলে থাকবে সেন্টমার্টিন?

ফেব্রুয়ারির পর কার দখলে থাকবে সেন্টমার্টিন?

বিএনএ, ঢাকা: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ–জরিপ দল সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। তৎকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মিস্টার মার্টিনের নাম অনুসারে সেন্টমার্টিন রাখা হয়। সেই থেকে ব্রিটিশ-ভারত প্রশাসনের হয়ে এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হওয়ার পরে পূর্ব পাকিস্তানের ও ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সার্বভৌম ভূখণ্ড হিসেবে সেন্টমার্টিন স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ভোলার মনপুরা দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেওয়ার অভিযোগের কথা প্রথম শোনেন। ওই বছর ২৮শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠক ঘিরে চীনপন্থী বাম দলগুলো অপপ্রচার চালায় যে মনপুরা দ্বীপ, যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হচ্ছে। তার বদলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, তখন সেন্ট মার্টিন এতটা পরিচিত ছিল না। পরিচিতি ছিল মনপুরা। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে মনপুরার নাম সবার মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

সেন্ট মার্টিন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক যে অনেক আগে থেকেই হচ্ছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৮০ সালের ১৮ই ডিসেম্বর দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে; যার শিরোনাম ছিল, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কাউকে নৌঘাঁটি করতে দেওয়া হবে না।’

ওই বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট দেশকে সেন্ট মার্টিনে নৌঘাঁটি করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে কয়েকটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল যে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

প্রায় চার দশক পর ২০২৩ সালে রাজনীতিতে সেন্ট মার্টিনের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আনেন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি ১৪ই জুন জাতীয় সংসদে সেন্ট মার্টিন ইস্যুটি তোলেন। মেনন বলেন যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন চায়, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কৌশলগত জোট কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়।

ছয় দিন পরে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের আরেক জোটসঙ্গী জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, আমেরিকা যখন কোনো দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের সরকার বা বিরোধী দলের চেয়ে জনগণের জন্য বেশি দুর্ভোগ বয়ে আনে।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর গত বছরের ২১শে জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে গণভবনে যে সংবাদ সম্মেলন করেন, তাতেও উঠে আসে সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গ।

অবশ্য সাবেক ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের ২২ শে জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁর রাজনৈতিক কৌশল। এখন এসব বক্তব্য দিয়ে তাঁরা সুবিধা নিতে চান।

সেন্টমাটিন নিয়ে গত বছরের ২৬ জুন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমি শুধু বলব যে এটি ঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি। আমরা কখনোই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা করিনি।’

এই অবস্থায় গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে যায়, অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় প্রতিবেশি দেশ ভারতে। ৮ই আগষ্ট প্যারিস থেকে উড়ে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সেমিনারে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন সিস্টেম চালুর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আলোচিত হয়। গণমাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।

কিন্তু ২২ অক্টোরব রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, সেন্ট মার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না।

প্রশ্ন ওঠেছে, শুধু কী পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নাকি আড়ালে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে? আলোচনা হচ্ছে, ফেরুয়ারির পর কার দখলে থাকবে সেন্টমাটিন? সব মিলিয়ে বঙ্গোপসাগরের ছোট এই প্রবাল দ্বীপটিকে ঘিরে ভূ- রাজনীতিতে নতুন করে বড় ঢেউ   ওঠেছে।

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/ বিএম/এইচমুন্নী 

Loading


শিরোনাম বিএনএ