25 C
আবহাওয়া
৪:৫১ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » নিউইয়র্কে ড.ইউনূসের মঞ্চে আওয়ামী লীগের লোক!

নিউইয়র্কে ড.ইউনূসের মঞ্চে আওয়ামী লীগের লোক!


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চালিয়ে নিতে গত ৮ জুলাই ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি দেয় শিক্ষার্থীরা। কমিটিতে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক রয়েছেন। তবে এই সম্বয়কের সমন্বয়ক ছিলেন একজন। পুরো আন্দোলনে মিছিল-সমাবেশে তাকে দেখা যায়নি। এমনকি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পরও এই সমন্বয়কদের সমন্বয়ক অর্থাৎ ‘মাস্টার মাইন্ড’ ছিল অদেখা, অচেনা।

YouTube player

গত ২৮ আগষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম প্রকাশ মাহফুজ আব্দুল্লাহ নিয়োগ পান। এরপরই বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়। গণমাধ্যম গুলো তাকে ‘মাস্টার মাইন্ড’ হিসাবে উল্লেখ করলেও মাহফুজ আলম বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু হাটে হাড়ি ভাঙ্গলেন খোদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথার ফাঁকে সফরসঙ্গী তিন জনকে পরিচয় করিয়ে দেন। এর মধ্যে তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরে সরকার পতন আন্দোলনের ‘বিহাইন্ড দ্য হোল’ বা ‘নেপথ্য কারিগর’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। বাকি দুই জনের একজন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি, অপরজন হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিন রাজিন। তাকে নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেপথ্য কারিগর ও অনুষ্ঠানের মধ্যমনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি জাহিন রাজিন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কেউ নন উল্লেখ করে লেখেন, সিজিআই ইভেন্টের লোকটি একজন অনুপ্রবেশকারী এবং একজন অসৎ ব্যক্তি ছিল। তার এ অনুপ্রবেশ নাশকতার অংশ।

মাহফুজ বলেন, ওই ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে সিজিআই ইভেন্টে যোগ দেন। সেখানে প্রতিনিধি দলের সদস্যসহ আমরা তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না। তিনি প্রতিনিধি দলের কারো সাথে যোগাযোগও করেননি।

মাহফুজ বলেন, স্যার যখন আমাদের মঞ্চে ডাকলেন, তিনি তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে ছুটে গেলেন। আমি সেই লোকটিকে মঞ্চে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারিনি, যদিও আমি সন্দেহ করেছিলাম।

এ ছাড়াও বিশ্বনেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে আমি অসহায় বোধ করছিলাম। মনে হয়, এটা ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতের একটি পূর্ব-পরিকল্পিত কাজ।

জাহিন রাজিনের অনুপ্রবেশ রোধ করতে না পারায় আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিন রাজিনের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে। তার সঙ্গে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ছবি রয়েছে। যা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে কে এই জাহিন রাজিন? কিভাবে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হলেন? তিনিই কেন তাকে মঞ্চে ডেকে নিলেন? সব মিলিয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কর্মকান্ডে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলা রয়েছে।

অথচ অনুষ্ঠানে ‘এই আন্দোলনটা খুব সুশৃঙ্খল ছিল’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা হঠাৎ করে হয়েছে এমন কিছু নয়। খুবই গোছানো আন্দোলন। এছাড়াও এত বড় আন্দোলন হয়েছে, মানুষ জানতো না কে আন্দোলনের লিডার? যার ফলে একজনকে আটক করা যেতো না। বলাও যেতো না যে একজনকে আটক করলে আন্দোলন শেষ।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘তারা যেভাবে কথা বলে, সেভাবে কাউকে কোনোদিন বলতে শুনিনি। নতুন বিশ্ব গড়তে, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে তারা প্রস্তুত।

মাহফুজকে দেখিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তার কথা শুনলে সারা পৃথিবীর যেকোনও তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। তারা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। তাদের সফলতার জন্য আপনারা প্রার্থনা করবেন। তাদের জন্য হাততালি হোক।’ এ সময় বিল ক্লিনটনসহ সবাই হাততালি দিয়ে সম্মান জানান।

মাহফুজ আলমকে সামনে এগিয়ে নিয়ে বলেন, ‘মাহফুজ হচ্ছে আন্দোলনের পেছনের কারিগর। যদিও সে এটা স্বীকার করতে চায় না। বলে, সে একা নয়, আরও অনেকে মাস্টারমাইন্ড আছে। কিন্তু সেই হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের নেপথ্য কারিগর।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘তাদের দেখতে আর ১০টা মানুষের মতোই লাগবে আপনাদের। কিন্তু তাদের কথা শুনলে, তাদের কাজ দেখলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। তারা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি। তাদের বক্তব্য ছিল, মেরে ফেললেও আমরা পথ ছাড়বো না।’

আপনাদের অনুরোধ করছি তাদের পাশে থাকবেন, যেন তাদের এই স্বপ্ন পূরণ হয়। আমাদের সবারই এই দায়িত্ব নিতে হবে।’এ সময় ক্লিনটনের হাত ধরে ইউনূস বলেন, ‘তুমি তো আমাদের সঙ্গে থাকবেই।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সামনে এগিয়ে আসেন ক্লিনটন। বন্ধু ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড. ইউনূস তার দেখা একমাত্র বয়স্ক ব্যক্তি, যাকে নেতৃত্বে পেতে তরুণ সমাজ মরিয়া হয়েছিল। এমন হাস্যরসের পরেই বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট মাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সেখানে ছাত্রদের পাশাপাশি মাহফুজ আলমের অবদান তুলে ধরেন ড. ইউনূস। তাকে বৈষম্য বিরোধী জুলাই বিপ্লবের ‘নেপথ্য কারিগর’ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশ-বিদেশে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। চাপা পড়ে গেছে, ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক, সাধারণ ছাত্র জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অবদান।
মাহফুজ আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইসাপুর গ্রামে। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

 

বিএনএ,শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ