বিএনএ, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে বদিউজ্জামান এ্যাপো (৫০) নামে হাই স্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে স্বর্পদংশনে মৃত্যু বলে প্রচারের পর মরদেহ দাফন করা হচ্ছিল। এ সময় দেখা গেলো মৃত ব্যক্তির কান ও মাথার পেছন দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ বদিউজ্জামান এ্যাপোর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এস্তেফাপুর গ্রামে। মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান এ্যাপো পোড়াহাটী ইউনিয়নের এস্তেফাপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম লতার ছেলে।
প্রথমে প্রচার করা হয় শনিবার রাতে তিনি সাপে দংশনের শিকার হন। মধ্যরাতে কিছু অজ্ঞাত যুবক বদিউজ্জামান এ্যাপোর বড় মেয়ে চৈতীকে ফোন করে জানায় তার পিতাকে স্বর্পদংশন করেছে। খবর পেয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে পৌছে অজ্ঞাত ওই যুবকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং বলেন “তোরা আমার পিতাকে হত্যা করেছিস”।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রহস্যময় এই মৃত্যুর ঘটনা পারিবারিক ভাবে এড়িয়ে রোববার জোহর বাদ মরদেহ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মৃত ব্যক্তির জানাজা শেষে মরদেহ যখন কবরস্থ করা হচ্ছিল। তখন তার মাথার পেছন ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দাফনে বাধা দেন এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
প্রতিবেশিরা জানান, বদিউজ্জামানের যদি সাপে দংশন করতো তাহলে তার মুখ দিয়ে লালা ও চেহারা কালো বর্ণ ধারণ করতো। কিন্তু সাপে কাটার কোন লক্ষন মৃত ব্যক্তির শরীরে নেই। তাছাড়া নিজের পুকুরপাড়ে দংশন করা ব্যক্তিকে কারা পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে গেলো এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাতের আধারে ডেকে প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামানকে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী পাখি খাতুন অভিযোগ করেন।
ছোট ভাই কলেজ শিক্ষক খায়রুজ্জামান সাইফুল জানান, আমরা হাসপাতালে পৌছে দেখি বড় ভাই মারা গেছেন। কিভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে আমরা সঠিকভাবে জানি না।
এদিকে এলাকাবাসির অভিযোগ, মৃত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বন্দ চলে আসছিল। এই দ্বন্দের জের ধরে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার নামে অনেক মিথ্যা মামলাও করা হয়। দীর্ঘ মামলা মোকদ্দমা শেষে আদালতের নির্দেশে সোমবার (২৬ সেপ্টম্বর) বদিউজ্জামানের মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করা কথা ছিল। স্কুলে যোগদানের আগেই তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে গ্রামবাসি সন্দেহ করছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, বদিউজ্জামানের মৃত্যু রহস্যজনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শুনেছি। এ কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
ওসি জানান, আদালতের নির্দেশে সোমবার স্কুলে যোগদান করার কথা ছিল তার। স্কুলে যোগদানের একদিন আগে তার এমন মৃত্যু আমরা রহস্যের চোরেখ দেখছি এবং মরদেহের সুরাতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএনএ/আতিক, এমএফ