16 C
আবহাওয়া
৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে হাসিনাকে পালাতে হতো না!

বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে হাসিনাকে পালাতে হতো না!


বিএনএ, ঢাকা: ৪ আগস্ট রাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সারারাত তিনি ঘুমাননি। নিরাপত্তা বাহিনীতে শেখ হাসিনার অনুগত সিনিয়র অফিসার এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীদের সঙ্গে ভোর পর্যন্ত বৈঠক, আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন তিনি। উপস্থিত নিরাপত্তা বাহিনীর সিনিয়র দুই একজন ছাড়া অধিকাংশ অফিসার ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ না করার পক্ষে অবস্থান নেন। তখনই শেখ হাসিনা বুঝে যান, তার পায়ের তলায় মাটি সরে গেছে। তবুও পদত্যাগে রাজি হয়নি। বরং তিনি আরও কড়া অ্যাকশনের পক্ষে অনড় ছিলেন।

YouTube player

পরিস্থিতির বিষয়ে শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম নানাজনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে ৪ জনের একটি চক্র বা ‘গ্যাং অব ফোর’- দায়ী ।

ভারতীয় সংবাদপত্র ‘The Indian Express’ ‘Sheikh Hasina gone, her party leaders in hiding: We could sense the anger, she didn’t listen’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে উনিশ শত আটচল্লিশ শব্দের ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেদক Shubhajit Roy গণভবন, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতারা পালানোর সুযোগ না পাওয়াসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সেতু ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরার্মশ দেন। এই ব্যক্তিদের ওপর তাঁর ছিল অন্ধবিশ্বাস।

৫ আগষ্ট সকাল ১১ টার দিকে সেনা প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্কার জানিয়ে দেন পদত্যাগ করে দেশত্যাগ না করলে ছাত্র-জনতা গণভবনে হামলা করবে। সে ক্ষেত্রে তার জীবনহানির সম্ভাবনা রয়েছে। পদত্যাগের জন্য সর্বশেষ ৪৫ মিনিটের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এই অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় ফেরা ছোটবোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে। শুরুতে জয় ছিলেন ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত।

তার জবাব ছিল ‘আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনাদেরকে কীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা ভুলে গেছেন?’ নিরাপত্তাবাহিনীর অনড় ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত জয় তার মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে সায় দেন। উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় চিন্তা বাদ দিয়ে অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন। দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি।

বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে তাৎক্ষণিক দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর রটে ৫ আগস্ট আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতের আগরতলা গেছেন, পরে দিল্লি। হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়েননি। এমনকি আগরতলায়ও যাননি। সম্প্রতি বিমান বাহিনীতে যুক্ত হওয়া সি-১৩০-জে সুপার হারকিউলেস এয়ারক্রাফ্‌ট-এ চড়ে শেখ হাসিনা সরাসরি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার আগে গণভবন থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় তাকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখানে প্রস্তুত ছিল বৃটিশ এয়ারফোর্সে ব্যবহৃত হওয়া আমেরিকান কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ড ডগলাসের তৈরি সি-১৩০ জে উড়োজাহাজ।

উড়োজাহাজ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বাহিরে ফ্লাইটে শেখ হাসিনার একমাত্র সফরসঙ্গী ছিলেন তার ছোটবোন শেখ রেহানা। হাসিনা ও রেহানাকে বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ননস্টপ ফ্লাই করে ৫ই আগস্ট সন্ধ্যায় দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে অপেক্ষমাণ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে রিসিভ করেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও ‘পুরোপুরি বিস্মিত’ করেছে। এক নেতা বলেন, ‘আমরা টেলিভিশনের খবর থেকে পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের বিষয়ে জানতে পারি।’

এভাবে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার ঘটনা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের জীবন বিপদের মধ্যে ফেলেছে। ‘বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী এবং সুযোগসন্ধানীরা’ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়গুলো নিশানা বানান। করা হয় অগ্নিসংযোগ, লুট, চালানো হয় ভাঙচুর।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আমরা একটা সময়ই শুধু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই। সেটি সেনাপ্রধান যখন বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ও মানুষ তা শুনতে টেলিভিশনের পর্দায় নজর রাখছিলেন।’
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ‘আড়ালে থাকা একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও দেওয়া হয় বিএনপিকে নির্বাচনে আনার।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি শেখ হাসিনার প্রত্যাখ্যান করা ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ–ক্ষোভ হয়তো মিটে যেত। দল জিততো এবং দল ক্ষমতায় থাকত।’

শামীমা চৌধুরী শাম্মী/হাসনা


শিরোনাম বিএনএ