27 C
আবহাওয়া
৭:১০ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিএনপির চালে কুপোকাত জামায়াত ও সমন্বয়করা!

বিএনপির চালে কুপোকাত জামায়াত ও সমন্বয়করা!


বিএনএ ডেস্ক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই এমন কথা বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে অভিয়োগ করেছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তারপর থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ডাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ অথবা অপসারনের দাবিতে মিছিল, সমাবেশ করে। একপর্যায়ে কিছু সংগঠন ঘেরাও করে বঙ্গভবন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশে একটি গাড়িতেও হামলা করে। তারা রাষ্ট্রপতির বাসভবনের ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এমনকি ছড়া গুলি ছুঁড়ে তাদের প্রতিহত করে। ওই সময় ৩ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সমন্বয়করা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দেয়।

YouTube player

আন্দোলনকারিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান দাবি করেছেন রাষ্ট্রপতি শপথ ভঙ্গ করে পদে থাকার নৈতিক ও আইনগত অধিকার হারিয়েছেন। এতে আগুনে ‘ঘি’ পড়ে। এতে রাষ্ট্রপতির বিদায়ের ক্ষেত্র প্রায় প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থায় বুধবার সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধির দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেস্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান এই মুহূর্তে তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণ চান না। এতে নতুন সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবে। বিএনপি নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করার জন্য ড. ইউনূসকে তাগিদ দেয়। বিএনপির এমন অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা বা অপসারণের কর্মসূচী থেকে পিছু হটে এবং আপাতত: ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে।

তবে শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে পাঁচ দফা দাবি পুর্নব্যক্ত করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন কত সময় টিকতে পারবেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও এটি বলা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আড়াই মাস পর বড় ধরনের রাজনৈতিক ধাক্কা খেয়েছেন!

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আবারো আলোচনা হতে পারে, সেখান থেকে আসতে পারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত।

সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। এটি প্রকাশ হওয়ার পর বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনের বাইরে দিনভর বিক্ষোভের পর সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। সেখানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নামও ভাসছিল। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের অন্তত দুজন উপদেষ্টার বৈঠকের পর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, বিচারপতি আহমেদই হতে যাচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা।

কিন্তু সংস্কার কাজ অসমাপ্ত রেখে বিচার বিভাগ ছাড়ার আগ্রহ নেই বলে দুই উপদেষ্টাকে সাফ জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।

একদিকে বিএনপির বিরোধীতা অন্যদিকে প্রধান বিচারপতি অনাগ্রহের কারণে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠা রাষ্ট্রপতির বিদায়ের আলোচনা বুধবার হঠাৎ করেই অন্য দিকে মোড় নেয়। এই পরিস্থিতে তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, সাংবিধানিক নয়’। আর সেজন্য বঙ্গভবনের বাইরে আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই।

এর আগে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান তার দলের স্থায়ী কমিটির অন্য দুই সদস্যকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করবো।

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ পরে গুলশানে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমেই শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটা বিলম্বিত হয়, বাধাগ্রস্ত হয় বা কণ্টকাকীর্ণ হয়, তা জাতির কাম্য নয়।

বিএনপি যে কারণেই এমন অবস্থান নিক না কেন, দলটির নেতাদের এমন বক্তব্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছে ভিন্ন ধরনের বার্তা গেছে। একই সঙ্গে বঙ্গভবনের বাইরের আন্দোলনকারীদের থমকে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ বা অপসারণে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এক টিলে অনেক পাখি মেরেছে!

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ