23 C
আবহাওয়া
৭:৩১ অপরাহ্ণ - অক্টোবর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার!

আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার!


আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়েছে।

YouTube player

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। গত ১৫ই জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।

সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে জড়িত আছে।
এই অবস্থায় সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ১৮ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালির স্বাধিকারের বিভিন্ন আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছাত্রলীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তঃকোন্দল, হামলা-মারামারি, খুন, শিক্ষার্থী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে ছাত্রলীগের সমালোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। এ কর্মসূচির জন্য রাত সোয়া নয়টার দিকে নেতা–কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার খবর পান তাঁরা। তখনই আনন্দমিছিল শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা

এদিকে গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার রাখে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তবর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বুধবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগকে বলি একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল। এখন প্রশ্ন আসে, ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কীভাবে রাজনীতি করতে পারে? যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে, তাহলে গণ–অভ্যুত্থান ও শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। আমাদের জীবন থাকতে তা হতে দেওয়া হবে না।’

অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান গত ১৬ বছরে আমাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। নতুন বাংলাদেশে যেন সেই রকম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক নয়। গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বসানো হয়েছে, যাতে আরেকজন শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে। বাংলাদেশের কিছু মৌলিক বিষয়ের সংস্কার দরকার। আর এ জন্য দরকার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’

পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে সাংবাদিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আসলে পেশাগত পরিচয় সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি, যে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অংশীদার ছিল, সুবিধাভোগী ছিল, তার একটাই পরিচয় সে ফ্যাসিস্ট এবং গণহত্যাকারী। সে শিক্ষক কি না, সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় না।’

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমাদের ৯ দফার একটি ছিল দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই মাসে আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ ছাত্রদের ওপর যখন হামলা চালিয়েছিল, তখন আমরা দেখেছি, তারা হিংস্র পশুর মতো আচরণ করেছে। মানবিকতা হারিয়ে ফেললেই মানুষ হিংস্র পশুর মতো আচরণ করে। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ দলীয় লেজুড়বৃত্তিতার কারণেই পশুত্বের পর্যায়ে গিয়ে নিজেদের আত্মমর্যাদা হারিয়েছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত পহেলা আগষ্ট সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে জামায়াত ইসলামী ও তার সহযোগী ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ক্ষমতাসীন হওয়ার আড়াই মাসের মাথায় প্রথম ধাপে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বার্তা দিতে চায়, আওয়ামী লীগ ও তার অন্য সহযোগী সংগঠন গুলোকে নিষিদ্ধ করা হবে। যাতে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ