বিএনএ ডেস্ক: বাঙালি জাতির অপেক্ষার প্রহর শেষ। শনিবার বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতু মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দেশি-বিদেশি ভিভিআইপি অতিথিরা অংশ নেবেন। সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে ফটোসেশন করবেন শেখ হাসিনা।
সুধী সমাবেশ শেষ করে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোলপ্লাজায় গিয়ে টোল দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাবেন সরকার প্রধান। সেখানে পদ্মা সেতুর আরেকটি নাম ফলক উন্মোচন করবেন তিনি।
জাজিরা প্রান্তে নামফলক উন্মোচনের পর মধ্যহ্ন বিরতিতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় যোগ দেবেন তিনি। সেখানে বিকেল নাগাদ ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর আবার ঢাকায় ফিরে আসার কথা রয়েছে।
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা হবে বলে উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের আশা কাঁঠালবাড়ির জনসভায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার পাশাপাশি সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জনসভায় যোগ দেবেন।
শুক্রবার, কাঁঠালবাড়ির জনসভা স্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এসময় দলটির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, জনসভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশে থেকে আগতদের জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। যে কেউ এসে সহজে কাঁঠালবাড়ির জনসভাস্থলে পৌঁছাতে পারবেন। বলেন, জনসভাস্থলে আগতদের জন্য সেবায় বিভিন্ন কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। পয়নিষ্কাশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুধু সড়ক পথে নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌ-পথেও জনসভায় যোগ দিতে আসবেন হাজারো নেতাকর্মী। জানান, নৌ-পথে আগতদের জন্য কাঁঠালবাড়ি এলাকায় ২০টি বাড়তি পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে কিভাবে জনসভাস্থলে পৌঁছাতে হবে রাস্তায় তার নির্দেশনাও দেয়া আছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা আশা করেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে সে নির্দেশনা দেবেন। নেতাকর্মীদের কিভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। কিভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করা যাবে। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে দল ক্ষমতায় আনতে করনীয়ে নিয়েও দলের সভাপতি নির্দেশনা দেবেন বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৬ জুন (রোববার) সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসভার নিরাপত্তা জোরদার করতে শুক্রবার সকাল থেকেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথ ব্যবহার করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। সন্ধ্যা থেকে এই নৌপথে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
১৯৮৬ সালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে যাত্রী পারাপারের জন্য ট্রলার সার্ভিস চালু করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে চালু হয় ফেরি। আর ১৯৯৬ সালে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। নদীভাঙন ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের কারণে মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে মাওয়া থেকে ঘাট সরিয়ে শিমুলিয়ায় নেয়া হয়। আর দক্ষিণে শিবচর প্রান্তে কাওড়াকান্দি, কাঁঠালবাড়ি ও বাংলাবাজারে সরিয়ে আনা হয়। নৌপথ দুটিতে বর্তমানে ৮৬টি লঞ্চ, ২৫০টি স্পিডবোট ও ৫টি ফেরি চলাচল করছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার মানুষ এই নৌপথ দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন।
বিএনএ/ এ আর