বিএনএ, চট্টগ্রাম : ক্ষমতার লোভ, অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়া ও ধরে রাখতে দেশের প্রধান বড় দুটি দল মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি। প্রতিষ্ঠার তিনবছরে পা রেখে দলটির নেতারা বলছেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আতঙ্কে থাকা মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে রাজনীতিবিমুখ বড় অংশের জনসাধারণকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে হবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি’র মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রহীম চৌধুরী।
মতবিনিময় সভায় তিনি সার্বজনীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ও প্রতিশোধের রাজনীতির গন্ডি থেকে দেশকে বেরিয়ে আনার উপায় তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় অভিযোগ করে বলা হয়, বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সবগুলো দল বলতে গেলে দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে বৈধ কিংবা অবৈধ পন্থায়, কৌশল কিংবা চক্রান্ত করে একে অন্যকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু এক পক্ষ অন্যপক্ষকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। এটা সম্ভবও নয়।
দলটির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের প্রায় ৮৫ভাগ জনগণ নির্বাচনে কোন না কোন দলকে ভোট দিলেও রাজনীতিতে সক্রিয় না। কিন্তু বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকট যেভাবে বাড়ছে সেটার সীমা ছাড়িয়ে গেলে রাজনীতিবিমুখ মানুষগুলো রাস্তায় নামবে। প্রতিবাদ করবে। তাতে জনবিস্ফোরণে দীর্ঘ সময় কিংবা ২০৪১ সাল পর্যন্ত টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঈদের পর চূড়ান্ত আন্দোলন করে সরকারকে হটানোর কথা বললেও এ পর্যন্ত ২৮টা ঈদ চলে গেছে। কিন্তু সেই ঈদ ও চূড়ান্ত আন্দোলন এর সময় এখনো আসেনি কিংবা তাদের সামর্থ্য এখনো অর্জিত হয়নি। আগামী দশবছরেও এই স্বপ্ন পূরণ হবে না। তবে মুখোমুখি অবস্থান ও সংঘাতের কারণে এই সময়ে দেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জনপ্রিয়তা না থাকার কারণে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিলে সরকারি দলের ভরাডুবি হবে এ কারণে তারা তেমন নির্বাচন দিতে চান না। ১০ ভাগের বেশী জনসমর্থন না থাকা সত্ত্বেও বিএনপি থেকে শিখে সবক্ষেত্রে পুরোপুরি সিন্ডিকেট কায়েম করায় সরকার টিকে আছে । দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়াসহ বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতির কারণে বিগত তিন মেয়াদের মতো আওয়ামীলীগ জোর করে সরকারে টিকে থাকার চেষ্টা করলে দেশ শীঘ্রই দেউলিয়া হয়ে যাবে। আফগানিস্তান কিংবা ইরাকের চেয়েও অদুর ভবিষ্যতে খারাপ হয়ে যাবে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবে।
এসময় তিনি বড় দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়ারও অভিযোগ করেন।
রহীম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর যেসব দেশ নিজেদের বিরোধ মিমাংসায় বিদেশীদের দ্বারস্থ হয়েছে-তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভারতে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও তাদের দেশের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কক্ষনো বিদেশীদের দ্বারস্থ হয় না। ভারত থেকে এই শিক্ষাটা বাংলাদেশকে নিতে হবে।
দেশীয় ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমরা কার্যকর ভূমিকা না রাখলে বাংলাদেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে শীঘ্রই পরিণত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
দলটির চেয়ারম্যান বলেন, দেশকে উদ্ধারে সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কোন আদর্শ দাঁড় করানো না গেলে দেশকে আসন্ন ক্ষতি থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। তার দাবি, এই আদর্শ বাস্তবায়ন ছাড়া ব্যাপক রক্তারক্তি, খুনোখুনি থেকে দেশকে বাঁচানো অসম্ভব।
সবাইকে নিজেদের গড়া সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টিকে যাচাই করুন। যদি আপনার কাছে সেরা মনে না হয়ে থাকে – তাহলে আপনি একটি নতুন দল প্রতিষ্ঠা করুন সেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দলের চেয়ে সেরা হলে আমরা আপনার সেই দলকে সহযোগিতা করবো।
রাজনীতিকে অপছন্দ করা নাগরিকদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এসময় দলের কার্যক্রম ও কর্মপরিধি নিয়েও কথা বলেন এর চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির কেন্দ্রীয় ফোরাম ৬৪ জেলা থেকে ৭১ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হবে। দল গঠনের পর চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি শুধুমাত্র একজন সদস্য হিসেবে থাকবেন। কেন্দ্রীয় ফোরাম গঠন হলে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সবকিছু চলবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি একটি নজীরবিহীন সাময়িক দল হিসেবে কার্যক্রম চালাবে। জেতার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেই কেবল নির্বাচন করবে। ঐক্য পার্টি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে না। তবে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতীকে ভোট করতে সহযোগিতা চাইবে। তবে কোনো জোট করবে না। আর নির্বাচনের সময় ব্যতীত দলের পক্ষ থেকে কোন মিছিল, মিটিংও হবে না।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টিতে পরিবারতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না বলেও জানান দলটির চেয়ারম্যান।
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সব দলের ব্যক্তিদের নিয়ে করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ-পদবীর লোভ নেই, রাজনীতি থেকে টাকা আয়ের কোন ইচ্ছে নেই তারা থাকবেন কমিটিতে। এক্ষেত্রে প্রথমে যিনি উদ্যোগ নিবেন তিনি তার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, কিংবা জেলার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য হবেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার শামসুল আলম মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নির্মল কান্তি দাশ, বিরাজ কান্তি চৌধুরী, অরুন তংচংগা, নিলুফার ইয়াছমিন সাধারণ সম্পাদক রাজীব চক্রবর্তী ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাসেদুল আলম, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনএ/ ওজি