35 C
আবহাওয়া
১:৩৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গবেষণা জরিপ : ৭৬% পুরুষ ও ৭৩% নারী ভ্যাক্সিন গ্রহণে ইচ্ছুক

গবেষণা জরিপ : ৭৬% পুরুষ ও ৭৩% নারী ভ্যাক্সিন গ্রহণে ইচ্ছুক

গবেষণা জরিপ : ৭৬% পুরুষ ও ৭৩% নারী ভ্যাক্সিন গ্রহণে ইচ্ছুক

এনএসইউ প্রতিনিধি:  “নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) এর গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট এর নেতৃত্বে কোভিড-১৯  ভ্যাক্সিন প্রয়োগের একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো গঠনে সহায়ককারী তথ্য উদ্ভাবনের লক্ষ্যে সাম্প্রতিককালে একটি গবেষণা জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৮ এর বেশী বয়সী নাগরিকদের মাঝে এ জরিপটি চালানো হয়।

গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল ছিল অংশগ্রহণকারীদের ভ্যাক্সিনের পিছনে ব্যয় করার অভিপ্রায়। ভ্যাক্সিনের সাথে মূল্য সংযোজিত হলে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতার হার ৭৪.৬% থেকে কমে নেমে আসে ৪৬% এ। অতএব, অর্ধেকেরও বেশী অংশগ্রহণকারী টাকা ব্যয় করে ভ্যাক্সিন নিতে অনিচ্ছুক।

এ কারণে স্বল্পশিক্ষিত মানুষের জন্যে যোগাযোগবার্তা এমনভাবে তৈরী করা প্রয়োজন, যা সহজে বোধগম্য হয় এবং মানুষের মাঝে ভ্যাক্সিন বিষয়ে বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরী করতে সমাজের মান্য ব্যক্তিগণ এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমুহের ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে।

এটি বিবেচনায় রাখতে হবে যে এই গবেষণার ফলাফল একটি নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের ভ্যাক্সিন বিষয়ে ভাবনা তুলে ধরেছে। নতুন ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনের সাথে সাথে এবং কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি বিষয়ে মানুষের মনোভাবের পরিবর্তনের সাথে সাথে ভ্যাক্সিন বিষয়ে ভাবনা ও মনোভাবও পরিবর্তিত হতে পারে।

এ গবেষণায় সহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও যুক্ত ছিলেন সেন্টার ফরইন জুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার (সিআইপিআরবি), রংপুর হাই পারটেনশন রিসার্চ সেন্টার ( এইচ & আরসি – রংপুর) এবং ইউনিভারসিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) ।

১২ ডিসেম্বর ২০২০ হতে ৭ জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত সর্বমোট  ৩৬৪৭ জন নাগরিক  এ জরিপে অংশগ্রহণ করেন (অংশগ্রহণের হার ৮০ শতাংশ)। বাংলাদেশের  ৮টি জেলার বিভিন্ন শহর, গ্রাম, এবং বস্তি থেকে রেন্ডম গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে এ  অংশ গ্রহণকারীদের বাছাই করা হয়েছে।

মুখোমুখি সাক্ষাতকারের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের আর্থ-সামাজিকঅবস্থা ও ভ্যাক্সিন সম্পর্কিত ভাবনা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ভ্যাক্সিন নেয়ার অভিপ্রায় তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, প্রথমভাগে ছিল যারা ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহী, দ্বিতীয়ভাগে ছিলো ভ্যাক্সিন নেয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্থ বা নিশ্চিত নয় এবং তৃতীয়ভাগে ছিলো যারা ভ্যাক্সিন নিতে ইচ্ছুক নয়।

ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতা পরিমাপ করা হয়েছে যারা এই গবেষনায় ভ্যাক্সিনটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যা মোট নমুনার ৭৪.৬ শতাংশ। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৭৪.৬ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন তারা একটি কার্যকরী, নিরাপদ ভ্যাক্সিন চিকিৎসক দ্বারা সুপারিশ করা হলে বিনামূল্যে নিতে আগ্রহী হবেন। ৭.৮  শতাংশ নাগরিক ভ্যাক্সিন নিতে একেবারেই ইচ্ছুক নয়। অপর ১৭.৬% অংশগ্রহণকারী ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা বা না করার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।

গবেষণায় পাওয়া গেছে দিনমজুরদের মাঝে ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতা অন্যান্য পেশাজীবিদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে কম। রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, ঠেলাগাড়ি চালকদের ও দিনমজুর হিসেবে এ গবেষণায় বিবেচনা করা হয়েছে। অর্ধেকেরও কম (৪৬.৮%) দিনমজুর ভ্যাক্সিন গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতার হার পাওয়া গেছে ৬২ থেকে ৮৩ %। মাসিক বেতনধারী অফিসকর্মীদের মাঝে ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল সর্বোচ্চ। চিকিৎসক ও নার্সদের ভেতরও ভ্যাক্সিনের উচ্চ গ্রহণযোগ্যতার হার পাওয়া গেছে, এ শ্রেণীর ৮১% ই ভ্যাক্সিন নেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন পেশাজীবীদের মাঝে ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার এর এই বৈচিত্র নির্দেশ করে যে নিম্ন আয়ের পেশাজিবিরা ভ্যাক্সিন গ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন, এমন কি বিনামূল্যে প্রাদান করা হলেও। এ গবেষণায় আরও উঠে এসেছে শহরে বসবাসকারী নাগরিকরা গ্রামবাসীদের তুলনায় ভ্যাক্সিন গ্রহণে অধিক আগ্রহী। গ্রামবাসীদের ভেতর ভ্যাক্সিন অনিচ্ছা ও দ্বিদ্ধাগ্রস্ততা উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে বেশি পাওয়া গিয়েছে। ৬৪% গ্রামে বসবাসকারী নাগরিক ভ্যাক্সিন নিতে তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন, শহরের নাগরিকদের মধ্যে যার হার পাওয়া গেছে ৮১%।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে মাত্র ৫৩ শতাংশ বস্তিবাসী ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহী, যা বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানের নাগরিকদের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিভিন্ন বয়সের নাগরিকদের মাঝে ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতার হার তুলনা করে দেখা গেছে বৃদ্ধদের (৬০ এর অধিক বয়স) মাঝে অন্যান্য বয়সের তুলনায় ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার কম (৬১%)। ১৮ থেকে ৫০ বছরের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার প্রায় একই রকম পাওয়া গিয়েছে – যা ৩০ বছরের নিচের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ছিল ৭৪%, এবং ৩১-৪০ ও ৪১-৫০ বয়স্কদের মাঝে ছিল যথাক্রমে ৭৩% ও ৭৮%। ৫১-৬০ বছরের অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার ৬৮% যা বিভিন্ন বয়স বিভাগের মাঝে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

এ ফলাফলের ভিত্তিতে বলা যায়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতার হার নিম্নমুখী। লিঙ্গ বিবেচনায় ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতায় উল্লেখযোগ্য তারতম্য পাওয়া যায় নি। ৭৬% পুরুষ এবং ৭৩% নারী ভ্যাক্সিন গ্রহণে ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

গবেষণাটি বর্তমানে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন অংশগ্রহণকারীদের মাঝেও ভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতার তথ্য সংগ্রহ করেছে। এতে দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে যারা দীর্ঘসময়ধরে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এজমা, কিডনী সমস্যা ইত্যাদিতে ভুগছেন তাদের মাঝে ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় কম। বিভিন্ন ধরণের দীর্ঘস্থায়ী রোগের রোগীদের মাঝে ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৫৩ থেকে ৬১ শতাংশের মধ্যে, যা সার্বিক গ্রহণযোগ্যতার হারের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম। পূর্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝেও অন্যদের তুলনায় ভ্যাক্সিন গ্রহণযোগ্যতার হার যথেষ্ট কম পাওয়া গিয়েছে। কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠা অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের কিছু বেশী (৫৬%) ভ্যাক্সিন গ্রহণে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

গবেষকদলঃ ড: আহমেদ হোসেন (এনএসইউ), ড: হাসান মাহমুদ রেজা, (এনএসইউ), জনাব মিনহাজুল আবেদিন (সিআইপিআরবি), ড: ফারাহনাজ রহমান (সিআইপিআরবি), জনাব আমিনুল ইসলাম (ইউল্যাব), ড: জাকির হোসেন (এইচ & আরসি – রংপুর)। আরও বিস্তারিত তথ্য এর জন্য ০১৭১৫৮৮৫৬৫১ (ড: হাসান মাহমুদ রেজা, ডিন, স্কুল অব হেলথ & লাইফ সাইন্সেস, এনএসইউ) নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বিএনএ/ মহিউদ্দীন ইবনুল হোসাইন

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ