বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকতে ভেসে এসেছে সাতটি বিরল প্রজাতির মৃত কচ্ছপ। গতকাল রবিবার বিকালে সৈকতের দক্ষিণ দিকের স্থানীয়দের নজরে আসে মৃত কচ্ছপ গুলো । কচ্ছপগুলোর এক একটির ওজন আনুমানিক ওজন ২০ থেকে ৪০ কেজি হবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়রা মনে করেন অতীতে সিইউএফএল সার কারখানার বর্জ্য মেশানো দূষিত পানির কারণে গরু মহিষের মৃত্যু হয়েছে। হয়তো একারণে এসব কচ্চপের মৃত্যু হতে পারে। না হয় অতীতে এত কচ্ছপের একত্রে মৃত্যু হয়নি। তবে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন কারখানা তো বিগত সময়ে ৮মাস বন্ধ ছিল তখন গরু মহিষ মারা গেছে তাহলে বর্জ্যে কিভাবে গেল। কারখানার বর্জ্যে কোনভাবে সাগরে যাওয়ার সুযোগ নাই।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টার্নেল রিসোর্ট এর পিছনে ২ টি , এক কিলোমিটার দূরে লুসাই পার্কের সামনে আরো তিনটি কচ্ছপের মরদেহ পড়ে রয়েছে। যেগুলো প্রায় পচন ধরেছে। আরো দুইটা গতকাল স্থানীয় ব্যবসারা মাটিতে পুঁতে ফেলে। এখনো পর্যন্ত এগুলো বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন পর্যটকরা।
সৈকতে ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধু ঘুরতে সৈকতে আসছি । পায়ে হেঁটে চরের দক্ষিণে যাওয়ার সময় মৃত অবস্থায় কয়েকটি কচ্ছপ জোয়ারের পানিতে ভেসে আসতে দেখি। কচ্ছপটির শরীরে পচন ধরেছে ।
সাগর হোসেন নামে আরেক পর্যটক জানান, আমরা পারকিতে বেড়াতে এসেছিলাম। সৈকতের লুসাই পার্কের এর দক্ষিণে তিনটি কচ্ছপ মৃত অবস্থায় দেখেছিলাম। যেখানে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিলো । আমার ধারণা আরো কয়েকটি থাকতে পারে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সমরঞ্জন বড়ুয়া জানান, পারকি সমুদ্র সৈকতে এমন ঘটনা সচরাচর হয়নি। মৃত্যুর বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে । বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগ এর সাথে যৌথভাবে এটার পর্যবেক্ষণ করলে মৃত্যুর কারণ ও এই প্রজাতির কচ্ছপ এর মৃত্যু রোধ করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য বলেন , জলপাইরঙা সাগর কাছিম বা পান্না কাছিম এই প্রজাতির কচ্ছপ বাংলাদেশে বেশি দেখা যায় । এগুলোর মারা যাওয়ার পিছনে প্রাথমিক যে কারণ থাকতে পারে তা হচ্ছে, বয়সের কারণে, মাছধরার ট্রলার বা শিপের আঘাতে, মাঝধরার জালের আঘাতে অথবা বিষক্রিয়া। আমরা বিষয়টি দেখছি । খোঁজখবর নিয়ে এর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসোর্চ সেন্টারের গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এত গুলো কচ্ছপ এক সাথে মৃত্যু হওয়া এটা উদ্বেগের কারণ। বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে কচ্ছপ গুলো মৃত্যু হওয়ার। তবে মনে হচ্ছে জাহাজ থেকেও অনেক সময় বিষাক্ত পদার্থ পানিতে ছেড়ে দেয়। বিষক্রিয়ায় এসব কচ্ছপের মৃত্যু হয়েছে।
সবশেষে মৃত কচ্ছপ গুলোর বিষয়ে জানতে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পারকি বিচ কমিটির সভাপতি তাহমিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ