16 C
আবহাওয়া
৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আশুলিয়ার ভূয়া মামলায় হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা!

আশুলিয়ার ভূয়া মামলায় হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা!

আশুলিয়ার ভূয়া মামলায় হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা!

বিএনএ, ঢাকা: গণ অভ্যূত্থানে নিহত হওয়ার মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে অভিযুক্ত করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে সারাদেশে বানিজ্যে নেমেছে প্রতারক চক্র। এই প্রতারক চক্রের নেপথ্য রয়েছে রাজনৈতিক দল ও পুলিশের একটি অংশ। সম্প্রতি ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে করা মামলাটি নিয়ে দেশজুড়ে বির্তক ও তোলপাড় শুরু হয়েছে। বাদী কুলসুম বেগম দাবি করেছেন চাকরির প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে একটি চক্র তাকে দিয়ে এই মামলা করিয়েছে।

প্রসঙ্গত. গত ২৪ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামী আল–আমিনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেন কুলসুম বেগম। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি হিসেবে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট সকালে তাঁর স্বামী আল–আমিন আন্দোলনে অংশ নেন। সরকারের পতনের পর বিকেল চারটার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয়মিছিলে আল–আমিন ছিলেন। কিন্তু পরাজয় মেনে না নিতে পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচার গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর স্বামী আল–আমিন মারা যান। আদালতের নির্দেশে গত ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় মামলাটি রের্কড হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে গত ১৩ নভেম্বর মামলার বাদী কুলসুম বেগমের স্বামী আল–আমিন মৌলভীবাজারের জুড়ী থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ তাঁকে নিজের এলাকা দক্ষিণ সুরমা থানায় জানাতে পরামর্শ দেয়। দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে পুলিশকে বিস্তারিত জানান আল–আমিন। পুলিশ বিষয়টি আশুলিয়া থানাকে জানায়। পরদিন পুলিশ দক্ষিণ সুরমায় গিয়ে আল–আমিনকে আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মামলার বাদীসহ আরও দুজনকে কক্সবাজার থেকে আটক করে থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। কুলসুম (২১) মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার সিংজুরী এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে। অন্য দুজন হলেন মানিকগঞ্জের ঘিওর থানা এলাকার রুহুল আমিন (৬৪) ও শিবালয় থানার টেপড়া এলাকার শফিউদ্দিন (৪০)। রুহুল আমিন ও শফিউদ্দিনের ফাঁদে পড়ে কুলসুম মামলা করেন বলে তিনি দাবি করেন।

কুলসুম বেগম বলেন, তিনি তাঁর স্বামী আল–আমিনের সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় থাকতেন। ২৮ আগস্ট সিলেট থেকে মানিকগঞ্জে এসে তিনি চাকরির খোঁজ করছিলেন। এর মধ্যে বাসে শফিউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে কুলসুম শফিউদ্দিনকে চাকরির দরকারের কথা জানালে শফিউদ্দিন তাঁকে মুঠোফোন নম্বর দেন। এর কিছুদিন পর তাঁর চাকরি হয়েছে জানিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে বলেন শফিউদ্দিন।

কুলসুম দাবি করেন, ওই ঘটনার কিছুদিন পর ঢাকায় নিয়ে ৫ আগস্ট এক ব্যক্তির মারা যাওয়ার ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে বাদী করা হয়েছে বলে জানান শফিউদ্দিন ও রুহুল আমিন। নিহত ব্যক্তিকে তাঁর স্বামী হিসেবে সবার কাছে পরিচয় দিতে বলেন। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে নানা ভয়ভীতি দেখান। পরে তিনি আদালতে মারা যাওয়া ব্যক্তি তাঁর স্বামী বলে জবানবন্দি দেন।

কুলসুম বেগম বলেন, ‘চাকরির লোভ ও ভয় দেখিয়ে আমাকে মামলার বাদী করা হয়েছে। আমি আসামি কাউকে চিনিও না। আমাকে হত্যার জন্য কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আমাকে দিয়ে তারা ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে মামলা করতে চেয়েছিল। কে মারা গেছে, আমি জানিও না।’

এর মধ্যে তাঁর স্বামী আল–আমিন নিজ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শফিউদ্দিন ও রুহুল আমিন তাঁকে সেখান থেকে কক্সবাজার নিয়ে একটি হোটেলে আটকে রাখে। সেখান থেকে আশুলিয়া থানা-পুলিশ তাঁদের তিনজনকে ধরে নিয়ে আসে।

থানা হেফাজতে থাকা রুহুল আমিন এই ঘটনায় তার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘কুলসুমের স্বামী আল–আমিন এমন পরিচয় দিয়ে আমার বাসায় ভাড়া থাকত এবং হোটেলে কাজ করত। আল আমিন পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি ৫ আগস্ট মারা গেছে। সিলেটের একজন, সে-ও আল–আমিন। সে-ও কুলসুমের স্বামী শুনেছি।

তবে আটক শফিউদ্দিন বলেন, ‘বাসে কুলসুমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার চাকরির প্রয়োজন জানালে রুহুল আমিনের সাথে কুলসুমকে পরিচয় করিয়ে দেন।

কুলসুম বেগম ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা ওই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুছ ছালাম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এদের একজন লিয়াকত দেওয়ান। তিনি ওই মামলার ৫৭ নম্বর আসামি। কুলসুমকে আশুলিয়া থানা হেফাজতে নেওয়ার খবর পেয়ে থানায় আসেন লিয়াকত দেওয়ান। তিনি বলেন একটি মাধ্যমে জানতে পারি, এ ঘটনায় রুহুল জড়িত। রুহুলের ছেলে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একজনের মাধ্যমে এফিডেফিটের মাধ্যমে মামলা থেকে বাদ দিতে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা দাবি করে। পরে ১১ জন মিলে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। অন্যদের কাছে থেকে আরও ১২-১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে লিয়াকত দেওয়ান জানতে পেরেছে।

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ