31 C
আবহাওয়া
৩:২৬ পূর্বাহ্ণ - জুলাই ২৪, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » ‘মব সংস্কৃতি এবং নিউটনের তৃতীয় সূত্র!

‘মব সংস্কৃতি এবং নিউটনের তৃতীয় সূত্র!


বিএনএ, ঢাকা : গত বছরের জুলাইয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্রদের বিক্ষোভ, সারাদেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ই জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। ছাত্রদের ৯ দফা দাবি থেকে একদফা তথা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। আন্দোলন সফল করতে ছাত্ররাও মেট্রোরেল, টেলিভিশন ভবন ও সেতু ভবনে ভাঙ্চুর পরবর্তী আগুন ধরিয়ে দেয়।

YouTube player

তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ছাত্রদের দমন করতে জারি করে কার্ফু। কিন্তু ছাত্ররা কার্ফু ভেঙ্গে রাজপথে নেমে আসে। শুরু হয় রাজধানীসহ সারাদেশে সহিংসতা। শত শত বিক্ষোভকারি ছাত্র-জনতা নিহত হয় পুলিশের গুলিতে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় সেনাবাহিনী। কিন্তু সেনাবাহিনী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সারা ঢাকা শহর চলে যায় ছাত্র জনতার দখলে। অবস্থা বেগতিক দেখে ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে ভারতে আশ্রয় নেয়। পতন হয় আওয়ামী লীগের।

পরবর্তীতে ছাত্রজনতার ‘মব’ শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন, সংসদ ভবনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

৮ আগষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল শান্তিতে নোবেল বিজয়ী দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। অবসান হবে মব সন্ত্রাসের। কিন্তু উল্টো চিত্র দেখা গেল।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ৭ মাস পর ছাত্র জনতার ‘মব’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর শেখ মুজিবুর রহমানের সৃত্মিবিজড়িত বাড়ি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এবং শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি ‘সুধা সদন’ জ্বালিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে ‘মব’ সংস্কৃতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রাণ গেছে শত শত মানুষের। সরকারের একচোখা দৃষ্টি ভঙ্গির কারণে ‘মব’ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী থেকে অজপাড়া পর্যন্ত।

যে ‘মব’সংস্কৃতিকে এতদিন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার লালন করে এসেছে, এক বছরের মাথায় সেই মবই সরকারকে গ্রাস করতে চলেছে। যাকে তুলনা করা যায় পদার্থ বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সঙ্গে। নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি হল “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”।

যে সব ছাত্র এক বছর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগে মূখর ছিল, দেশবাসী দেখলো, তারাই বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩২ জন নিহত এবং গভীর রাত তিনটার দিকে মঙ্গলবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণার ঘটনায় শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে সচিবালয় ঘেরাও করে।

বিকেল চারটার দিকে বিক্ষুব্ধ কয়েক শ শিক্ষার্থী সচিবালয়ের গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকেন এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। এ ঘটনায় আহত অন্তত ৭৫ শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে।

এদিকে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল। এর মধ্যে সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, দিয়াবাড়ি গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত বা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। পরে শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। তাঁরা সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানান।

আইন উপদেষ্টা সব দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে তা মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টারা আবার কলেজের ভেতরে ঢুকে যান।

বেলা সাড়ে তিনটার কিছু আগে কলেজ থেকে বের হন দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এ সময় কলেজের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়নি।

উপদেষ্টাদের গাড়ি দিয়াবাড়ি মোড়ে গেলে বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। তারা গাড়ি বহরে হামলা চালাতে তৎপর হয়ে ওঠেন এবং আইন উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মাইলস্টোনে ফিরে এসে একাডেমিক ভবনে অবস্থান নেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২ হাজার সদস্য এসে সড়ক থেকে ছাত্রদের সরিয়ে দেয়। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ সফর সঙ্গীরা সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তাঁদের গাড়িবহর দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপো দিয়ে পার হয়ে যায়। অবসান হয় ৯ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস ‘মব’ পরিস্থিতির।

বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ