16 C
আবহাওয়া
১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিদায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অজানা কথা

বিদায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অজানা কথা

রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ

বিএনএ, ঢাকা: রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে উঠে এসে সংসদে স্পিকারের পদ পেরিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিতে চলেছেন মো. আবদুল হামিদ। টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আজ রোববার (২৩ এপ্রিল) বঙ্গভবনে তার মেয়াদ পূর্ণ করবেন। এরপর নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দায়িত্ব নেবেন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

এদিকে আবদুল হামিদকে বড় ধরনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বঙ্গভবন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়া হবে।

বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আবদুল হামিদের বিদায় পর্ব শুরু হবে। প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) গার্ড অব অনার ও অভিবাদন জানাবে।

বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে তার বিদায় পর্ব শুরু হবে। তাকে ফুলসজ্জিত একটি খোলা জিপে বঙ্গভবনের ফোয়ারা এলাকা থেকে প্রধান গেটের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী জিপটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে সেটা টেনে নিয়ে যাবেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশ থেকে ফুলের পাপড়ি ছিটানো হবে।

এরপর প্রধান গেট থেকে ভিভিআইপি প্রটোকলে বিদায়ী যাত্রা করবেন আবদুল হামিদ। দীর্ঘ ১০ বছরের বঙ্গভবনের বসবাস ছেড়ে নিকুঞ্জে তৈরি নিজের নতুন বাড়িতে যাবেন। এরপর সেখানেই বসবাস করবেন তিনি।

নিকুঞ্জে থাকবেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, অবসরে গেলে তিনি নিকুঞ্জে নিজ বাড়িতে উঠবেন। গত ১৩ মার্চ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানিয়ে অবসরে আড্ডা দিতে সাংবাদিকদের নিকুঞ্জের বাড়িতে অগ্রিম আমন্ত্রণ জানান। তিনি মাঝে মধ্যে মিঠামইনে পৈতৃক ভিটায় গিয়েও সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন। অবসরে তিনি আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড লেখা শেষ করবেন বলেও জানিয়েছেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার রাজনীতি, আমার জীবননীতি’ বই প্রকাশিত হয়েছে। এতে তার জন্ম ও রাজনীতির শুরু থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সন্নিবেশ আছে। অবসর সময় তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময়কালের ঘটনা নিয়ে আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড লিখবেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।

প্রবীণ রাজনীতিক আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে এমএলএ হওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকামুখী হলেও রাজধানীতে তার স্থায়ী কোনও নিবাস ছিল না। তিনি কখনও ভাড়া বাসা, কখনও এমপি হোস্টেল, সংসদ সদস্য ভবন কিংবা লালমাটিয়ায় মেয়ের বাড়িতে বসবাস করতেন। স্পিকার হিসেবে থেকেছেন সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসায়। সর্বশেষ ১০ বছর কাটালেন বঙ্গভবনে। বঙ্গভবনে থাকাকালে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নিকুঞ্জে প্রাপ্ত রাজউকের প্লটে বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়িটির কাজ শেষ করিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হয়েও অনেকটা নিজেই তিনি নির্মাণকাজ তদারকি করেছেন। বঙ্গভবন থেকে অনেকবার তিনি সরাসরি নিকুঞ্জে গিয়ে কাজের দেখভাল করেছেন। অবসরে সেখানে বসবাস করবেন—এমন চিন্তা থেকে সাধ্যের মধ্যে অনেকটা যত্ন করে কাজটি করেছেন। বেশ কিছু দিন আগে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

বঙ্গভবন ও আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিকুঞ্জের বাড়িতে তিনি ছাড়াও তার দুই ছেলে রাসেল আহমেদ (তুহিন) ও রিয়াদ আহমেদ (তুষার) থাকবেন। তবে, স্ত্রী রাশিদা খানম বেশিরভাগ সময় ক্যান্টনমেন্টে বড় ছেলে ও সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিকের সঙ্গে থাকবেন বলে জানা গেছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ রাশিদা খানমের সিএমএইচে নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজনে তিনি সেখানে থাকবেন। অবশ্য তিনি নিকুঞ্জের বাসায় যাওয়া আসা করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসরের পর মাঝে মধ্যে জন্মস্থান মিঠামইনে গিয়েও থাকবেন বলে জানা গেছে। এজন্য পৈতৃক ভিটায় তিনি ও তার ছেলেরা মিলে একটি পাঁচতলা ভবনও নির্মাণ করেছেন। নিজের নামে চালু হওয়া ‘আবদুল হামিদ ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে তিনি এলাকায় সমাজসেবা ও মানবকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন বলে জানা গেছে।

লেখালেখি করে সময় কাটানোর পরিকল্পনা

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর নতুন কোনো দায়িত্ব পালন নয়, লেখালেখি করে সময় কাটাবেন বলে জানিয়েছেন মো. আবদুল হামিদ। তাঁর দীর্ঘ ৬৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহু সাংবাদিকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিদায়ের আগে তাঁদের কয়েকজনকে গত ১২ মার্চ বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে গল্পে-আড্ডায় অতীত স্মৃতিচারণার পাশাপাশি অবসর জীবনের কর্মপরিকল্পনার কথা জানান। তিনি জানান, বঙ্গভবন ছেড়ে উঠবেন রাজধানীর নিকুঞ্জে। মাঝে-মধ্যে যাবেন জন্মস্থান মিঠামইন। এ সময় লেখালেখি হবে তাঁর প্রধান কাজ। তিনি বলেন, ‘আমার ভালো লাগছে যে আমি সম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে পেরেছি। এ জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসরের পর আর কোনো পদ নেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আবদুল হামিদের প্রারম্ভিক জীবন

মো. আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রাম। তার পিতা ছিলেন মো. তায়েব উদ্দিন এবং মাতা তমিজা খাতুন। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলী জিঃসিঃ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কিশোরগঞ্জের ‘সরকারি গুরুদয়াল কলেজে’। সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে তিনি আইএ (এইচএসসি) ও বিএ পাশ করেন।

সরকারি গুরুদয়াল কলেজে’ পড়াশোনা করা কালীন সময়ে তিনি ওই কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে এলে তিনি আবদুল হামিদকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন। আতপর তিনি ‘সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং একজন আইনজীবী হিসেবেই তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে ওকালতি করেছেন এবং বেশ কয়েকবার কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন।

আবদুল হামিদের পারিবারিক জীবন

এডভোকেট আবদুল হামিদের সহধর্মিণী হলেন মোছা. রাশিদা হামিদ, তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য। অপর ছোট ছেলেরা রাসেল আহমেদ (তুহিন) একজন সমাজসেবক এবং রাজনীতিবিদ ও রিয়াদ আহমেদ তুষার একজন কৃষিবিদ। এছাড়া  তার একমাত্র মেয়ের নাম স্বর্না হামিদ এবং তিনি একজন আইনজীবী।

মো. আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন

১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬১ সালে এডভোকেট আবদুল হামিদ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি সরকারি গুরু দয়াল কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে তিনি পাকিস্তান সরকার দ্বারা কারারুদ্ধ হন। এরপর তিনি ১৯৬৩ সালে গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক হন। এডভোকেট আবদুল হামিদ ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি হন এবং ১৯৬৫ সালে সরকারি গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি হন। এরপর ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তিনি পুনরায় কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

১৯৭০ সালে এডভোকেট আবদুল হামিদ তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ- ১৮ নির্বাচনি এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। এমনকি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদেরও তিনি সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে আবদুল হামিদ

এডভোকেট আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ৭১- এর মার্চের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোতে তিনি কিশোরগঞ্জে স্বাধীনতার পক্ষে জনবল গঠন করা শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ তিনি কিশোরগঞ্জের রণখোলা মাঠে জনসভায় স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে টেলিগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়ে তিনি সেইদিনই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেন। এপ্রিলের প্রথম দিকে সামরিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের- কিশোরগঞ্জ, ভৈরব ও বাজিতপুর শাখা থেকে প্রায় ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা নিরাপদ স্থান হিসেবে বিবেচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ন্যাশনাল ব্যাংক শাখায় জমা রাখেন।

এরপর আবদুল হামিদ ভারতের আগরতলা যান যেখানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লার অধিকাংশ সংসদ সদস্য অবস্থান করছিলেন। সেখানে তাদের সাথে এবং আগরতলার উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ ও মত বিনিময় করেন। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য আগরতলায় আগত যুবকদের নিয়ে তিনি ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্প চালু করেন এবং এর চেয়ারম্যান হন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি শরণার্থীদের দেশে ফেরার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং তারা দেশে ফিরলে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনিও দেশে ফিরে আসেন।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত

দেশে ফিরেই তিনি কিশোরগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর তিনি গণপরিষদের সদস্য মনোনিত হন। এরপর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩০ (বর্তমান কিশোরগঞ্জ- ৫) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবার ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন। ১৯৭৬- ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সরকারের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারসহ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কারা বরণ করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০০৯ সাল পর্যন্ত আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বার কিশোরগঞ্জ বার এ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ সালে দেশের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আবার ১৯৯১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন পুনরায় তিনি দেশের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এডভোকেট আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় সংদের ডেপুটি স্পিকার এবং ২০০১ সালের ১২ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর তিনি দেশের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে ৪র্থ বারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি দেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ- ৫ আসন থেকে ৫ম বারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় সংদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে একই বছরের ২০ মার্চ থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। আর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

পুরষ্কার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এডভোকেট মো. আবদুল হামিদকে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজ জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে মিঠামইন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন কলেজ সহ প্রায় ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার আইনজীবী সমিতি, জেলা পাবলিক লাইব্রেরী, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং কিশোরগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবের আজীবন সদস্য।

প্রথম কোনও রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক বিদায়

বাংলাদেশে এর আগের ২০ জন রাষ্ট্রপতির কেউই কার্যত আনুষ্ঠানিক বিদায় পাননি। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেই অর্থে সৌভাগ্যবান। বঙ্গভবন তাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার ও প্রটোকল দিয়ে নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে প্রথম ও ষষ্ঠ রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তাক্ত বিদায় হয়েছে। একদল দুষ্কৃতকারীর হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিদায় হয় একইভাবে। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তৃতীয় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও চতুর্থ মোহাম্মদ মুহম্মদউল্লাহ তাদের মেয়াদ শেষ না করেই বিদায় দেন। এরমধ্যে সংবিধান সংশোধন করে আবারও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তনের ফলে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতির পিতা রাষ্ট্রপতি হওয়ায় মুহম্মদউল্লাহর বিদায় হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নতুন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত খন্দকার মোশতাক আহমদ। তবে বিপ্লব-পাল্টা বিপ্লবে তিন মাসেরও কম সময় দায়িত্ব পালন করে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এবং আবুল ফজল মুহম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে চাপের মুখেই পদ থেকে সরে যেতে হয়। সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন। এরপর রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সরিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রথমে এএফএম আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসান। পরে তাকে সরিয়ে নিজেই দেশের ১৩তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। গণআন্দোলনে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি (১৪তম) হন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি পদে প্রত্যাবর্তন করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, সাহাবুদ্দীন আহমদ ও প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রত্যেকে তাদের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করলেও বিদায়টা আনুষ্ঠানিক হয়নি। তারা তিন জনই নীরবে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। দেশের ১৭তম রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেড় বছরের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর ইমপিচমেন্ট পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে পদত্যাগ করে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। দেশের ১৮তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার (অস্থায়ী)। দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান চার বছরের মতো দায়িত্ব পালন করে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে তার আনুষ্ঠানিক বিদায়ের কোনও সুযোগ ছিল না।

অবসরে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ

রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন (২০১৬) অনুযায়ী, কোনও রাষ্ট্রপতি ৬ মাস বা তার বেশি সময় দায়িত্ব পালন করলে অবসর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেই হিসেবে ১০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনকারী আবদুল হামিদও পাবেন অবসর সুবিধা। রাষ্ট্রপতি তার মাসিক বেতনের ৭৫ শতাংশ অবসর সুবিধা পারেন। আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির বর্তমান মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবে অবসরের পর মো. আবদুল হামিদ মাসে ৯০ হাজার টাকা অবসর ভাতা পাবেন।

আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনও চাকরি বা পদ হতে অবসরে গিয়ে অবসর ভাতা গ্রহণ করলে, তিনি ওই অবসর ভাতা এবং রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতার মধ্যে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনও একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। আবদুল হামিদ যেহেতু এ ধরনের কোনও চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, ফলে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতেই অবসর সুবিধা পাবেন।

অবশ্য অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। এটা গ্রহণে সম্মত হলে আবদুল হামিদ এককালীন এক কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাবেন (দায়িত্ব পালন ১১ বছর ধরে)। অবশ্য অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিক গ্রহণ করতে হলে তাকে প্রাধিকার অর্জনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে ইচ্ছার কথা জানাতে হবে। আবদুল হামিদ কোনটি গ্রহণ করবেন, এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন অবসর ভাতা গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি।

অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও কিছু সুবিধাও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাফতরিক ব্যয়ও পাবেন সরকার থেকে। আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন। এর নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত বিল পরিশোধ থেকেও অব্যাহতি দেবে সরকার। তিনি একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনা মূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউজ বা রেস্ট হাউজে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা পাবেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। চিকিৎসা সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউজ বা রেস্টহাউজে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীও পাবেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অসুস্থ অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২৪ এপ্রিল তিনি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাকে দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে।

প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী), আবু সাঈদ চৌধুরী, মোহাম্মদউল্লাহ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, জিয়াউর রহমান, আব্দুস সাত্তার, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী, আবদুর রহমান বিশ্বাস, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জমিরুদ্দিন সরকার, ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও জিল্লুর রহমান।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ