বিএনএ ডেস্ক:করোনা প্রতিরোধক টিকা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ডহর মৌভোগ এলাকায় ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন পাঁচ যুবক। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন ও পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করছেন তারা।
বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশন ও করোনা ভ্যাকসিনের বিষয়ে অবহিত করতে প্রতিদিন মাইকিংও করা হচ্ছে। গত দুই দিনে এলাকার আট শতাধিক মানুষ ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে বিনামূল্যে এই কার্যক্রম গ্রহণ করায় খুশি স্থানীয়রা।
ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের ডহর মৌভোগ গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় মৌভোগ-বটতলা এলাকায় একটি দোকানে প্রতিদিন বিনামূল্যে স্থানীয়দের করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য বিনামূল্যে নিবন্ধন করে দিচ্ছেন।
পাঁচটি ল্যাপটপ ও দুটি প্রিন্টার দিয়ে আগত মানুষদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাজ করছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ জন শিক্ষার্থী।
তারা হলেন- নিরুপম হালদার, শ্রীধাম বিশ্বাস, অশোক মুখার্জী, অরবিন্দ ও মিথুন সরকার। এদের নানা পরামর্শ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন সরকারি নর্থ খুলনার প্রভাষক অনির্বান রায়, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার শিশুল বালা, মোংলা কাস্টমস হাউজের পরিদর্শক অরবিন্দ মালী এবং ডহর মৌভোগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অজামিল ঢালী।
স্বেচ্ছাশ্রমে নিবন্ধন কাজে নিয়োজিত নিরুপম হালদার বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা বিনামূল্যে মানুষকে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করে দিচ্ছি। একজন মানুষ তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নিয়ে এলে খুব অল্প সময়ে ও সহজেই নিবন্ধন করে দিচ্ছি। নিবন্ধন শেষ হলে টিকা কার্ডটিও আমরা প্রিন্ট দিয়ে দিচ্ছি। নিবন্ধন পরবর্তী কীভাবে টিকা গ্রহণ করতে হবে সে সম্পর্কেও আমরা ব্রিফ করে দেই।’
শ্রীধাম বিশ্বাস বলেন, ‘করোনা টিকা সম্পর্কে কারও মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থাকলে আমরা তার ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করি। আমাদের এখান থেকে নিবন্ধন করার পরে কয়েকজন টিকা গ্রহণ করেছেন। বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করতে পেরে খুশি স্থানীয়রা।’
স্থানীয় হেমলতা মন্ডল, অভিজিত মজমুদার, লক্ষী বিশ্বাস, সনিয়া বিশ্বাসসহ কয়েকজন বলেন, ‘মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারি মৌভোগ-বটতলা এলাকায় বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করা যায়। আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নিয়ে এসেছি। নিবন্ধন করার পরে আমাদের একটি কার্ডও দিয়েছেন। এই কার্ড নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে টিকা দিতে পারব।’
মোংলা কাস্টোমস হাউসের পরিদর্শক অরবিন্দ মালী বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক মানুষ করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জানেন না। গ্রামের মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞানও খুব স্বল্প। করোনাভাইরাস ও ভ্যাকসিন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও নেই অনেকের। ফলে গ্রামের মানুষ খুব কমই করোনার টিকা গ্রহণ করছেন। গ্রামের মানুষকে সহজভাবে করোনা টিকা গ্রহণের জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের এখান থেকে প্রায় ৯০০ মানুষ নিবন্ধন করেছে। শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রাম ও অন্যান্য এলাকার মানুষ এলেও নিবন্ধন করে দেব। আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
নলধা-মৌভোগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মো. মহসীন বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হওয়ার পর আমরা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করে দিয়েছি। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষরা পরিষদে তেমন নিবন্ধন করতে চাইত না। ডহর-মৌভোগ গ্রামের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের লোকেরা বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। আমি তাদেরকে উৎসাহ দিয়েছি। এ উদ্যোক্তাদের যেকোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তা করা হবে।’
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘ফকিরহাট উপজেলায় প্রায় পৌনে দুই লক্ষ মানুষ। আমার উপজেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। মানুষের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে যে পশ্চাদপদতা ছিল, সেটা কেটে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের কয়েকজন যুবক বিনামূল্যে নিবন্ধন ও মানুষকে পরামর্শ দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার ফলে গ্রামের মানুষও টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এই কাজের মাধ্যমে তারা জনগণের নৈকট্য লাভ করেছেন। তাদের এই মহতী উদ্যোগ ফকিরহাট উপজেলার মানুষের কাছে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
Total Viewed and Shared : 16