20 C
আবহাওয়া
৮:৪৪ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩০ (টাঙ্গাইল-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩০ (টাঙ্গাইল-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে টাঙ্গাইল-১ আসনের হালচাল।

YouTube player

টাঙ্গাইল-১ আসন

টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসনটি মধুপুর এবং ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ১৩০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আবুল হাসান চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪ শত ২২ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৭ হাজার ৪ শত ৪০ জন। নির্বাচনে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৪ শত ৫৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মিসেস আসিকা আকবর। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৫ শত ৭ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকদারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকদারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩ শত ৫৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫২ হাজার ২৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৭ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুস সালাম তালুকদার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৮ শত ৩৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হয়

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬২ হাজার ১ শত ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ১ শত ৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হয়। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ৪ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল গফুর মন্টু। ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৫ শত ৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ২ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪ শত ১৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭১ হাজার ২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৪ শত ৬১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৭ শত ৭৬ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শহীদুল ইসলাম, আম প্রতীকে ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টির আবু মিল্লাত হোসেন, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির সালামত হোসাইন খান এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ আলী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৮০ হাজার ২ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শহীদুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১৬ হাজার ৪ শত ৪৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ, শুধুমাত্র ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর টাঙ্গাইল-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫২.৮৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৪৪%, বিএনপি ৩৬.৪৪%, জাতীয় পাটি ০.৮৯%, জামায়াতে ইসলামী ৮.২০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.০৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.১৩%, বিএনপি ৪৩.৩০%, জাতীয় পাটি ২.৮২%, জামায়াতে ইসলামী ২.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.০১% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৮১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫০.১৮%, ৪দলীয় জোট ২০.৮৯%,জাতীয় পার্টি ০.৪১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৮.৫২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৩৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৫.৫১%, ৪দলীয় জোট ৩৩.৮৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬০% ভোট পায়।

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ও ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এই আসনে তার দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবুও এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ-বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার তারেকুল ইসলাম তারেক, কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রেজাউল করিম হিরণ।

বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ডাকসুর সাবেক সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হক, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী।

জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইবেন মধুপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মোহাম্মদ আলী।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ও ধনবাড়ী) আসনে, ১৯৯১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ছেলে, আবুল হাসান চৌধুরীর হাত ধরেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালেও তিনি নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০১ সালে রাজনীতির মারপ্যাঁচে আবুল হাসান চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। আওয়ামী লীগ থেকে ড. আব্দুর রাজ্জাক মনোনয়ন পেয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন। এই আসন থেকে তিনি ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এটিই আওয়ামী লীগের অন্যতম ভরসা। তবে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ আছে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ তারা তাদের প্রতিনিধিদের কাছে পান না।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে শক্তিশালী। বিএনপি নিজস্ব ভোট ব্যাংকের সঙ্গে, ক্ষুব্ধ মানুষদের ভোট যুক্ত করে আসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে। আসনটি আওয়ামী লীগের নির্ভার ঠিকানা হলেও আগামী নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে দলটিকে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩০তম সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভবনা বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বিএনএ/শিরীন,রেহানা, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ