।।ওসমান গনী।।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার ইতিহাস বিশ্বের আর কোথাও নেই । এ দিনটি বাঙালির জীবনের সকল চেতনার মূল উৎস।মাতৃভাষার মান রক্ষা করার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকে। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ তার এ ঘোষণায় জোরালো প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জোরদার হয়। ঐ দিন পাকিস্তানি শাসকবর্গ ১৪৪ ধারা চালু করে। ছাত্র সমাজ সে ধারা ভেঙে ব্যাপক আকারে মিছিল বের করে। শুরু হয় গুলি বর্ষণ। শহীদ হন অনেকে।
এ হত্যাকান্ডের খবর সারা দেশে দ্রুত পৌঁছে যায়। আন্দোলন আরও ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হতে থাকে। পরবর্তীতে তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। একুশের চেতনায় ভাস্বর আজ বিশ্ববাসী। একুশের চেতনার ফলে, এ দেশবাসী বুঝেছিল মিষ্টি কথায় অধিকার আদায় হয় না। এর জন্য প্রয়োজন রক্তক্ষরণ। আর এর ফলেই ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি জয়লাভ করে।
ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি কোন বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তিথি নয়, একটি জাতির জীবন্ত ইতিহাস। এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ; যেন ‘সজীব লাভা দ্রাবক আগ্নেয়গিরি’, কখনও অন্তর্দাহে গর্জন করছে আর কখনও চারিদিকে অগ্নি ছড়াচ্ছে। সত্যি এ ইতিহাস মৃত নয়, একেবারে জীবন্ত।’
২১ ফেব্রুয়ারী উদযাপন এখন আর বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দিনটি এখন বিশ্বব্যাপী উদযাপনের। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্যসাধারণ অর্জন।
বিএনএ/ওজি