বিএনএ ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসককের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বাকবিতন্ডাকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে তিনটি সংগঠন।রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশের সঙ্গে ওই চিকিৎসকের তর্কাতর্কি ঘটে।পুলিশের বিরুদ্ধে উত্যক্ত ও হেনস্তা অভিযোগ এনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন(বিএমএ)।
বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিজ গাড়িতে কর্মরত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো এবং নিজের নামাঙ্কিত চিকিৎসক গাউন পরিহিত অবস্থায় পরিচয় দেয়ার পরেও তাকে আক্রমণাত্মকভাবে জেরা করে উত্যক্ত ও হেনস্তা করার দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।চিকিৎসকের এতগুলো পরিচয় দেয়ার পরও কেবলমাত্র মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।ওই ঘটনার খবর ও আংশিক ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে বলে তার ভিত্তিতে ওই চিকিৎসক সাঈদা শওকত জেনিকে দোষ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিএমএ।
বিবৃতিতে বিএমএ আরও বলেছে, মহামারিকালে ঝুঁকি নিয়ে জরুরি সেবায় থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা লকডাউনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ‘নিগ্রহ’ ও ‘হয়রানির’ শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ‘আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ’ হয়ে পড়ছেন।
দেশের বেশিরভাগ চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, তারা সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন না। ফলে তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড নেই।
এদিকে, ডা. সাঈদাকে ‘হেনস্তার’ প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ)র বিএসএমএমইউ শাখাও।স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিভজী ও সদস্য সচিব ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটোর সই করা প্রতিবাদ লিপিতে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়।
অন্যদিকে, ওই চিকিৎসক ডা. সাঈদা শওকতের আচরণের নিন্দা জানিয়ে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি আদেশ বাস্তাবায়নের চলমান কার্যক্রমের সময় গত রোববার জনৈক চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেন। শুধু তাই নয় নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঔদ্ধতাপূর্ণ আচরণ করেন এবং জাতির সামনে পেশাজীবী সংগঠগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন।
ওই চিকিৎসকের আচরণে পুলিশ বাহিনী মর্মাহত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, নিজ মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লংঘন এবং কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জোর দাবি জানাচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ঝুঁকি নিয়েও পুলিশের কাজ করে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণকে সেবা দিতে গিয়ে এই পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৯১ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, মহামারি করোনা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গত ১৪ এপ্রিল জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপরজরুরি প্রয়োজনে কারো বের হতে মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করে পুলিশ।
পরে ওই মুভমেন্ট পাস দেখার নামে পুলিশ হয়রানি করছে বলে চিকিৎসকদের কাছ থেকে; অভিযোগ আসে। যদিও জরুরি সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের পরিচয়পত্রই তাদের পাস বলে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর মধ্যেই গত রোববার এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশের তল্লাশিতে আটকা পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপক। তখন তার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার তর্কাতর্কির একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।এরপর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পৃথক বিবৃতি আসলো।
বিএনএনিউজ/আরকেসি
Total Viewed and Shared : 1 39 , 39 views and shared