24 C
আবহাওয়া
১০:০৬ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » তামান্না উপাখ্যান: প্রেমিক আমিত মুহুরি, স্বামী সাজ্জাদ!

তামান্না উপাখ্যান: প্রেমিক আমিত মুহুরি, স্বামী সাজ্জাদ!


বিএনএ ডেস্ক : গ্রেপ্তারের পর  চিৎকার করে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং সিটিতে স্ত্রী তামান্না শারমিনকে ডাকছিলেন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে স্বামীর ডাকে সাড়া না দিয়ে পালিয়ে যান স্ত্রী তামান্না। পরদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে ও নানা অঙ্গভঙ্গিতে লাইভে আসেন ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন। কাড়ি কাড়ি বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে তার স্বামীকে মুক্ত করে আনবেন বলেও জানান।

YouTube player

এক লাইভে মুহুর্তে সারাদেশে ভাইরাল হয়ে যায় তামান্না শারমিন। অনেকে প্রশ্ন তুলেছে কে এই তামান্না শারমিন। কীভাবে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী হয়েছেন।

তামান্না শারমিনের পুরো নাম তামান্না আহমেদ। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী। তামান্না চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ডানহাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা অমিত মুহুরীর প্রেমিকা ছিলেন।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাইন্না পুকুরপাড় এলাকার অরুণ মুহুরীর দুই ছেলের মধ্যে অমিত বড়। ২০১০ সালে এমইএস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে আগ্রাবাদ এলাকায় বন্ধু মো. রাসেলকে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে আহত করেন অমিত। নারীঘটিত বিষয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ হয়। ঘটনার এক মাস পর রাসেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর অমিত পালিয়ে থাকেন। ২০১৩ সালের ২৩শে জুন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সদর দপ্তর – সিআরবি এলাকায় রেলের কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী সাজু পালিত ও শিশু মো. আরমান নিহত হন। এই জোড়া খুনের আসামি ছিলেন অমিত মুহুরী।

২০১৭ সালের ৯ আগস্ট নন্দনকানন এলাকার এক ফ্ল্যাটে অমিত মুহুরী তার বন্ধু ইমরানুলকে মারধরের পর ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ চার দিন ধরে ফেলে রাখেন বাথরুমে। এরপর লাশ ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে অ্যাসিড ঢালেন। পরে ইট, বালু, সিমেন্ট ও চুন দিয়ে ড্রামের মুখ ঢালাই করে ফেলে দেন আধা কিলোমিটার দূরের এক দিঘিতে। খুনের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়ে যান অমিত। এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে ছিল তামান্না শারমিন।

অমিতের প্রেমিকা তামান্নার সঙ্গে বন্ধু ইমরানুলের সম্পর্ক থাকতে পারে, এমন সন্দেহে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। ওই বছর ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার একটি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন অমিত মুহুরি। ২০১৯ সালের ৩০শে মে অমিত মুহুরী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আরেক আসামির ইটের আঘাতে নিহত হন। তবে অমিত মুহুরির প্রেমের সর্ম্পক অস্বীকার করেছে তামান্না শারমিন। তার দাবি এটি সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ সারোয়ার গং এর অপপ্রচার।

ছোট সাজ্জাদের বিয়ে প্রসঙ্গে তামান্না বলেন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্রে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সাজ্জাদ। গত ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে রাউজান উপজেলার নজু মিয়া হাটের একটি মসজিদে সাজ্জাদ-তামান্নার বিয়ে হয়। তামান্নার এটি তৃতীয় বিয়ে এবং ছোট সাজ্জাদের দ্বিতীয় বিয়ে। তামান্না ২০১৭ সাল থেকে দুবাই, মালেশিয়া ও চীনে বিভিন্ন হোটেলের মদের বারে ওয়েটারের কাজ করেছেন।

ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না দাবি করেছেন, রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিয়েছে সূচী নামে এক নারী। সে সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ আরেক সন্ত্রাসী সরওয়ারের বান্ধবী। সরওয়ারের লোকজন সাজ্জাদকে মারধর করে সিকিউরিটি রুমে আটকে রাখে। ঘটনার দুই ঘন্টা পর পুলিশ উপস্থিত হয় এবং তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়। সাজ্জাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো কৃতিত্ব নেই বলে উল্লেখ করেন তামান্না।

কারি কারি বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে ১০/১২ দিনের মধ্যে জামিন করা সংক্রান্ত ভিডিওটি তার প্রতিপক্ষ তেজগাঁও থানায় তাকে করতে বাধ্য করেছে বলে দাবি করেন এবং এই ভিডিওর জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর তিন খুনের আসামী সাজ্জাদকে ধরতে গিয়ে তামান্না শারমিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে পুলিশ। পরে ৬ জানুয়ারি তিনি জামিনে বের হন। এরপর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান, আরও দুই এসআই ও অন্যান্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তামান্না শারমিন। সেই মামলায় তিনি ওসির বিরুদ্ধে নিজের ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ফেসবুকে লাইভেও আসেন তামান্না।

থানায় মারধর করে তামান্নার ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে গত ২৮শে জানুয়ারি রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে ফেসবুক লাইভে এসে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশের ওসিকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় পেটানোর হুমকি দেন সাজ্জাদ।

তামান্না শারমিন ও সাজ্জাদ দু’জনই বেপরোয়া জীবনযাপন করেন। চালান একাধিক ফেসবুক পেইজ, আইডি, টিকটক অ্যাকাউন্ট। নিয়মিত টিকটক করে আলোচনায় থাকেন তামান্না শারমিন। এ ছাড়া সাজ্জাদও তার আইডি ও ‘অল ইটস হোপ’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন হরহামেশা। মূলত সাজ্জাদ বিএনপি ও ছাত্রদল কেন্দ্রিক পোস্ট এবং নিউজ শেয়ার করে বিএনপি’র প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা জানান দেয়ার চেষ্টা করেন।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলালের সঙ্গে তার একাধিক ছবি রয়েছে। বিএনপি’র এই তরুণ নেতার উদ্যোগে আয়োজিত সবক’টি সভাসমাবেশে সাজ্জাদ অংশ নিতেন। তারেক জিয়ার ছবি হাতে নিয়ে সমাবেশে গিয়ে ছবি পোস্ট করেন তিনি। নিয়মিতই ছাত্রদল ও বিএনপি’র সব ছবি, ভিডিও পোস্ট করে প্রচার চালান। ছোট সাজ্জাদ শিবির সাজ্জাদ নামে পরিচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ খানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে পরিচিত। আলোচিত ‘এইট মার্ডার’র আসামি সাজ্জাদ খান ভারতে পলাতক আছেন।

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ