বিএনএ, ঢাকা: দেশে দিনদিন করোনা সংক্রমনের হার বেড়ে যাচ্ছে। গত এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক করোনা শনাক্তের হার ১ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন জানান, কভিড-১৯-এর নতুন উপধরন জেএন.১ সংক্রমণের হার অনেক বেশি। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে।
মুশতাক হোসেন বলেন, মনে রাখতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কডিভ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, যাঁরা মেডিক্যাল বা হাসপাতালে কাজ করে, যাঁদের বয়স ৬০-এর বেশি, দীর্ঘদিনের পুরনো রোগ আছে, তাদের মাস্ক পরা জরুরি। এ ছাড়া যারা এখনো চতুর্থ ডোজের টিকা নেয়নি, তাদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা নেওয়া উচিত। কারণ কভিডের টিকা নতুন এই উপধরনের ক্ষেত্রেও কাজ করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেকই ঘটছে নতুন এই উপধরনের মাধ্যমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটিকে কড়া নজরে রেখেছে এবং করোনার এই উপধরনকে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘আগ্রহের বৈকল্পিক’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। নতুন ধরন জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই, যেমন—জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, ক্লান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, ডায়ারিয়া ও বিভ্রান্তি বোধ করা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫.১২ শতাংশ। হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১৪ জন। এর মধ্যে ছয়জন রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আইসিইউতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৭১১ জন। সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ জন। মৃত্যু ২৯ হাজার ৪৭৯ জনের। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯১ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৬৪ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ মহিলা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৫১ শতাংশ ও মৃতের ৩০ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি ২০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ও ১২ শতাংশ খুলনা বিভাগে।
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সে বছর শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মৃত্যু সাত হাজার ৫৫৯ জনের। ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মৃত্যু ২০ হাজার ৫১৩ জনের। সে বছর সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয় ২৮ জুলাই। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মৃত্যু এক হাজার ৩৬৮ জনের। গত বছর ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মৃত্যু ৩৭ জনের।
কভিড রোগী ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান রাখা ওয়ার্ল্ডমিটারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার একদিনে সারা বিশ্বে তিন হাজার ৫৮ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, আড়াই কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে চতুর্থ ডোজ হিসেবে এসব টিকা দেওয়া হবে।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী