22 C
আবহাওয়া
১১:৩৩ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় ৫৫ কমান্ডো, ভ্রমণে চার্টার ফ্লাইট!

শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় ৫৫ কমান্ডো, ভ্রমণে চার্টার ফ্লাইট!


শেখ হাসিনা এখন ভারতেই অবস্থান করছেন এটা সারা বিশ্ব জানে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত কখনো তা বলেনি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পরপরই অনেকটা কাকতালীয়ভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাফ জানিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা ভারতেই আছে এবং থাকবেন। এতে একটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের বর্তমান বৈরি সর্ম্পক দীর্ঘায়িত হবে। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় আড়াই মাস পার করলেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বরফ গলার কোনো ইঙ্গিত মিলছে না।
যদিও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার, দুর্গা পুজায় ইলিশ পাঠিয়ে বরফ গলাতে চেয়েছিলেন। কিন্ত এখন ভারতের হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে বরফ যেন ধীরে ধীরে পাথরে পরিণত হচ্ছে।

YouTube player

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হুলিয়া মাথায় নিয়েই শেখ হাসিনা ভারতের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে আগামী ২৪শে অক্টোবর থেকে ইউরোপের ২টি, মধ্যপ্রাচের ২টি দেশ সফর করবেন। তার আগের দিন ২৩ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শেখ হাসিনার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষ চার্টার বিমান। নিরাপত্তায় থাকবেন ৫৫ জন ভারতীয় কমান্ডো। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ও সম্মান দিচ্ছে ভারত।

২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড যাবেন। ২৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ড থেকে যাবেন ফিনল্যান্ডে। ২৮ অক্টোবর ফিনল্যান্ড থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন তিনি এবং ৩০ অক্টোবর তুর্কী সফর শেষে ভারত পৌঁছাবেন শেখ হাসিনা। এই সব দেশ সফরকালে তিনি সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করবেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণ মামলা, নির্যাতন, লুট, অগ্নি সংযোগসহ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন অসাংবিধানিক কর্মকান্ড ও মানবধিকার লংঘনের বিষয় বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরবেন।
শেখ হাসিনার প্রতি ভারত সরকারের এমন সহানুভূতিশীল আচরণ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা অর্ন্তবতীকালীন সরকারকে নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে।

এ দিকে ভারত ভিসা আবেদনের কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। সমগ্র বাংলাদেশে ভারতের ১৫টি ভিসা সেন্টার রয়েছে। প্রতিবছর ১৬ লাখ বাংলাদেশি ভারতে ভ্রমন, খাজা গরীবে নেওয়াজের দরবারে জেয়ারত ও চিকিৎসার জন্য গমন করেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলো বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও ভারত জানিয়ে দিয়েছে যে চিকিৎসার জন্য ভিসা এবং কিছু জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা তারা ইস্যু করবে না।

আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে সীমিত পরিসরে ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর ১৬ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কেবল সীমিত পরিসরে জরুরি ও মেডিকেল ভিসা ইস্যু করবে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন। একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক কতটা জোরালো সেটি প্রকাশ পায় ভিসা নীতির মাধ্যমে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশে যখন স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হবে তখন ভারত পুরোপুরি কাজ শুরু করবে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভিসা দেওয়া সীমিত করার মাধ্যমে ভারত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে চাচ্ছে । যাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা না হয়। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এটিকে ডিপ্লোম্যাটিক সিগন্যাল,” বলে অবহিত করেছেন।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, পাঁচই আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়া এবং পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভারতের মধ্যে একটা ‘সেট ব্যাক’ বা ‘আঘাত’ হিসেবে এসেছে। শেখ হাসিনার এমন পরিণতি হতে পারে সেটি ভারতের হিসাবনিকাশের মধ্যে ছিল না।
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, পাঁচই আগস্টের পরে বাংলাদেশে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মধ্যে উদ্বেগ আছে।

নিরাপত্তার বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সরকারের পক্ষে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

ভারতের দিক থেকে নিরাপত্তার ইস্যুটি সামনে আনা হলেও ঢাকায় অন্যান্য বিদেশি দূতাবাসগুলোর তরফ থেকে নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশ্যে এ ধরনের কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। অন্যান্য দেশগুলোর দূতাবাস নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না থাকলেও ভারতের এতো অস্বস্তি কেন?

গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সীমিত পরিসরে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার খোলার পর ঢাকায় ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেন অনেকে। বিক্ষোভের পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট মোতায়েন করেছে সরকার। তবুও ভারত গণ ভিসা না দেওয়ার পক্ষে অটল রয়েছে।

বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন্ দিকে যাবে সেটি নিয়ে এখনো নানা বিশ্লেষণ চলছে ভারতে। ভারতের সরকার ও বিভিন্ন মহলে এক ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের প্রভাব বেড়েছে। শেখ হাসিনা যেসব নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাদের কারাগারে আটক রেখে ছিলেন তাদের সবাইকে মুক্তি দিয়েছে ড.ইউনূস সরকার। সে কারণে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে সন্দেহের চোখে দেখছে ভারত। এক কথায় ভারত বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের দিক থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে ।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী,ওজি/হাসনা

 


শিরোনাম বিএনএ