35 C
আবহাওয়া
৮:৩৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চিনাবাদামের খোসা দিয়ে ব্যাটারি তৈরি

চিনাবাদামের খোসা দিয়ে ব্যাটারি তৈরি


lবিএনএ, বিশ্বডেস্ক : আফ্রিকার দেশ সেনেগালে এক প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ব্যাটারি তৈরির উদ্যোগ চলছে৷ রাজধানী দাকারের শেখ আন্টা ডিয়প বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ল্যাবে বিশেষ কাঁচামাল দিয়ে সেই ব্যাটারি তৈরি হয়েছে৷ সেই উপাদান চিনাবাদামের খোসা!

সেনেগালে চিনাবাদামের খোসার অভাব নেই৷ চিনাবাদামই সে দেশের চারটি প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যের একটি৷ গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় এই খাদ্যপণ্য চাষ করে৷ কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে চলতি বছর ফসলের পরিমাণ কমে ১৬ লাখ টন হতে চলেছে৷ এখনো পর্যন্ত খোসা ফেলা দেওয়া অথবা পুড়িয়ে ফেলা হতো৷ প্রোফেসর এনগমের মতে, বর্জ্য হিসেবে সেটি একেবারে খাঁটি৷

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বালা ডিয়প এনগম প্রতিষ্ঠান ১৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বায়োমাস জ্বালানিতে রূপান্তর করার বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছে৷ সেটি একটি জটিল ইলেকট্রোকেমিকাল প্রক্রিয়া৷ সবার আগে খোসাগুলি গুঁড়া করে পানির সঙ্গে মেশানো হয়৷ বালা ডিয়প এনগম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘গোটা মিশ্রণটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এভাবে ভেজানো হয়৷ তবে সেটাই অন্যতম জরুরি বিষয় হওয়ায় আপনাকে সময়কাল সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারবো না৷ তারপর সেই মিশ্রণ ছেঁকে এই তরল পাই৷ আরও কিছু উপাদান যোগ করলে ব্যাটারির পজিটিভ চার্জ সৃষ্টি করতে পারি৷”

গবেষকরা চিনাবাদামের খোসার মধ্যে উচ্চ মাত্রার কার্বন কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে নির্যাস হিসেবে জিংক অক্সাইড বার করে নেন৷ সূর্যের আলোর বিকিরণের মুখে উচ্চ তাপমাত্রায় সেই তরল থেকে জিংক অক্সাইড উবে গিয়ে ধাতব দস্তায় পরিণত হয়৷ সেটি শক্তি ধারণ করতে পারে৷

এগুলি পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি, যেগুলির সম্ভাবনা প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো হলেও সেটির খারাপ দিকগুলি নেই৷ কারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মধ্যে কোবাল্টের মতো উপাদান রয়েছে৷ আফ্রিকার কংগোয় বিপজ্জনক খনিতে প্রায়ই শিশুদের দিয়ে সেই ধাতু উত্তোলন করা হয়৷

এমন পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি সেনেগালে চালু করা সম্ভব হলে খুবই সুবিধা হবে৷ কারণ প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িঘর সরকারের পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত নয়৷ সেখানে ব্যাটারি বা সৌরশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়৷ অনেকে কোনো রকম জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায় না৷

গ্লোবাল গ্রিন গ্রোথ ইনিশিয়েটিভের পরিবেশ বিশ্লেষক মোদু ফালের মতে, জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশাল ঘাটতি রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, সেই ঘাটতি পূরণ করতে হলে বায়োমাসের মতো জ্বালানির উৎসের আরও বিকাশের প্রয়োজন রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে অনেক উন্নতির অবকাশ রয়েছে৷ জ্বালানি হিসেবে বায়োমাস আজকের সমস্যার সমাধান হতে পারে, কারণ চিনাবাদাম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সেনেগালে চিনাবাদামের খোসার বিশাল জোগান রয়েছে৷ বিশাল পরিমাণ বায়োমাসের দৌলতে সেনেগালে কাসামঁসের মতো অঞ্চলে জ্বালানির এই উৎস বর্তমান ঘাটতি অনেকটাই কাটাতে পারবে৷”

প্রাথমিক পরীক্ষায় গবেষকরা তাঁদের বায়ো ব্যাটারি কাজে লাগিয়ে রিমোট কনট্রোল বা মোবাইল ফোন চালাতে পেরেছেন৷ তবে তাঁদের পণ্য এখনো বাজারের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে নি৷ বালা ডিয়প এনগম বলেন, ‘‘এখন আমাদের ল্যাবে সব প্রক্রিয়া আরও উন্নত করে তুলতে হবে, সব প্যারামিটার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যাতে সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করে৷ তারপর সেটি বাজারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে৷”

দাকারের গবেষক দলের মনে তাদের ব্যাটারির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ নেই৷ কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে হলে আরও গবেষণা ও আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে৷ তখনই সেনেগালের মানুষ ‘পিনাট পাওয়ার’ ব্যাটারি সত্যি ব্যবহার করতে পারবেন৷

বিএনএনিউজ/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ