24 C
আবহাওয়া
১১:১৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১০, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » আগামীর বাংলাদেশে ‘এনসিপি’ থাকবে না! 

আগামীর বাংলাদেশে ‘এনসিপি’ থাকবে না! 


বিএনএ, ঢাকা: জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, লাটিচার্জ সহিংসতার  মধ্য দিয়ে বহুল কাঙ্খিত, আলোচিত-সমালোচিত জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের  শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে গণফোরাম ছাড়া ২৪টি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন।

YouTube player

অবশ্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)সহ চারটি বামপন্থী দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল তারা জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে যাবে না। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে  তারা  অভিযোগ করেন সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনুষ্ঠান বর্জনকারি বামপন্থী দলগুলো বিজয়ী হয়েছে। তাদের আপত্তির কারণে জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫ এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না।

তবে চরম ভরাডুবি হয়েছে, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ অনুকম্পায় গড়ে উঠা জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির। দলটি ঘোষণা করেছিল জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়া না হলে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবেন না, স্বাক্ষরও করবেন না। এনসিপি কথা রেখেছে। জুলাই সনদ অনুষ্ঠান যখন চলছিলো তখন এনসিপি তাদের শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

ওই আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে  এনসিপি  আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করেছে।

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এনসিপির মধ্যে বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে। তবে এটাকে বিভক্তি বলে মনে করছেন না বিএনপি মহাসচিব। ‘তারা ভুল বুঝতে পারবে এবং তারা সঠিক জায়গায় এসে পৌঁছাবে’, বলেন আলমগীর।

প্রসঙ্গত, জামায়াত ইসলামী জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে গেলেও  আইনি ভিত্তি ছাড়া  সনদে স্বাক্ষর করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলটি অপ্রত্যাশিতভাবে  জুলাই  সনদে স্বাক্ষর করেছে। এতে আরও বেকায়দায় পড়েছে এনসিপি। এমনিতেই শাপলা প্রতীক নিয়ে এতদিন দলটি যে উল্লাস- উচ্ছাসে ছিল তা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে চুপসে গেছে। হুমকি-ধামকিতে কাজ হয়নি। শুক্রবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম আবারও জোরের সঙ্গে বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে শাপলা প্রতীক দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের বিধিমালায় শাপলা বরাদ্দ  দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এই অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টি জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে যে একলা চলো নীতি  গ্রহণ করেছেন তাতে নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা দলটির দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পেয়েছে। সামনে এনেছে অস্থিত্ব  বিলীন হওয়ার সম্ভাবনাকে—যা আগামীর বাংলাদেশে দলটিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে পারে—এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তার প্রমাণ মিলেছে, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল মূখ্ সমন্বয়ক সারজিস আলমের কন্ঠে। তিনি বলেছেন  কিছুদিন পরে দেখা যাবে অভ্যুত্থানটাই নাই।  আবার কিছুদিন পরে দেখা যাবে, এই অভ্যুত্থানের যারা যোদ্ধা ছিল, রাজপথে নেমেছিল তাদেরকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন কায়দায় তাদেরকে অভিযুক্ত করে একেকজনকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেওয়া হবে, বিভিন্নভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

জুলাই যোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দিতে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, সরকার জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে সুবিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। দাবি আদায়ে তাদের আবারও রাজপথে নামতে হচ্ছে। সরকার তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যা শোনা যাচ্ছে তা লজ্জার, বেদনার। শুক্রবার রাজধানীর সেনপাড়া পর্বতা ঈদগাহ মাঠে ঢাকা-১৫ আসনের শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের ‘শহীদ’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহত ব্যক্তিদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য আইনি সহায়তা—এসব দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে ‘জুলাই সনদে’ উল্লেখ ও বাস্তবায়নের বিষয়টি যুক্ত না করলে আগামী রোববার দেশের প্রতিটি জেলায় মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’। সব মিলিয়ে একটি ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতি মধ্যে রয়েছে অর্ন্তবর্তী সরকার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট, নতুন সংবিধান, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলে বিএনপিকে বস্তাবন্দী করতে চেয়েছিল জামায়াত ও এনসিপি। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বিএনপি যেভাবে জুলাই সনদ চেয়েছে, সেভাবেই এগিয়ে গেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ