27 C
আবহাওয়া
১০:৩০ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সিপাহীদের আত্ম- চিৎকারের সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্ক

সিপাহীদের আত্ম- চিৎকারের সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্ক

সিপাহীদের আত্ম- চিৎকারের সাক্ষী বাহাদুর শাহ পার্ক

 ।।সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।।

পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সড়কের সংযোগস্থল বাহাদুর শাহ পার্ক। জনবহুল কংক্রিটের এ এলাকাটির মানুষের স্বস্তি ফেলার যেন একখণ্ড সবুজ জায়গা। তাই অবসর সময় কাটাতে ও শারীরিক কসরতের জন্য অনেকেই ছুটে আসেন এক একরের এই জায়গাটিতে।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি মুসলিম স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর কাছাকাছি থাকায় শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্রও এই পার্কটি। তাই প্রতিদিন বসে প্রাণের মেলা। তবে অনেকেই জানেন না ইংরেজ শাসনের পৈশাচিক নির্যাতনের সাক্ষী এবং একসময় এ এলাকার ভীতিকর জায়গা ছিল এই পার্ক। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় বিদ্রোহী দেশীয় সেনাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে রাখা হতো পার্কটিতে।

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, প্রথমে জায়গাটির নাম ছিল ‘আন্টাঘর’। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ঢাকার নবাব আব্দুল গণি ও নবাব আহসান উল্লাহ। তবে এটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয় তা জানা না গেলেও ১৮০০ সালের দিকে এই আন্টাঘরে ঢাকায় আগত আর্মেনিয়দের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানা যায়। পরে ১৮৫৭ সালের ২২ নভেম্বর ইংরেজ সেনারা ঢাকার লালবাগ কেল্লায় আক্রমণ করে দেশীয় সেনাদের পরাস্ত করে। এরপর সিপাহীদের ধরে এনে এই আন্টাঘর ময়দানে পৈশাচিক নির্যাতন করে প্রকাশ্যে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় বহুদিন। এ নিয়ে এ এলাকায় এক ধরনের ভীতিকর অবস্থা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভারতবর্ষে ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনভার চলাকালে জায়গাটির নামকরণ করা হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’।

পরে ব্রিটিশরা চলে গেলে ১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী উপলক্ষে পার্কে একটি চার কোনাকৃতির স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। নতুন নাম দেয়া হয় ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’। সেই থেকে এই নামেই পরিচিত পার্কটি। ২০২০ সালের ১১ মার্চ বাহাদুর শাহ পার্কটি সংস্কারের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্বোধন করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়,পার্কটির চারপাশ পূর্বে ঘেরা থাকলেও বর্তমানে জনসাধারণের জন্য একেবারেই উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বসার জন্য কংক্রিটের বেঞ্চের আসন তৈরি করা হয়েছে। বিদ্রোহী সেনাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের ওপরে রয়েছে একটি ডোম ও ওবেলিস্ক। যা রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহনের কথা মনে করিয়ে দেয়। পার্কের সামনেই রয়েছে লম্বা আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা ১৮৮৪ সালে ঢাকার নবাব স্যার খাজা আহসানুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র খাজা হাফিজুল্লাহর মৃত্যুতে নির্মিত হয়। রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। এর মধ্যে ঔষধিসহ বিরল প্রজাতির গাছও রয়েছে। তাই ভোরবেলায় জনবহুল পুরান ঢাকার এ স্থানে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরে ওঠে। বিকালে রিকশা ও ছোট যানবাহনের শব্দকে ছাপিয়ে পাখির কলরবই যেন শোনা যায় বেশি। এছাড়া সেখানে বিদ্রোহী সেনাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয় সে জায়গাটি বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে। সেখানে নিয়মিত শারীরিক কসরত করার জন্য পূর্বে সরঞ্জাম থাকলেও এখন শুধুই আড্ডাস্থল। দিনের বেলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের ৮-১০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে প্রাণবন্ত আড্ডা বসে।

আশিক ও মিনহাজ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, এ বছর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হয়েছি। ক্যাম্পাসের পাশে হওয়ায় বন্ধুদের নিয়ে পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছি। এ পার্কের নাম অনেক শুনেছি। তবে এখানে সিপাহী বিদ্রোহীদের নির্যাতন করে ফাঁসিতে ঝুলানো হতো জানতাম না। আমার মতো হয়তো অনেকে এটি জানে না।

বিএনএ নিউজ/ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ