বিএনএ, ঢাকা: ঈদের ছুটিতে রোগীদের সেবা অটুট রাখতে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, লেবার রুম, জরুরি অস্ত্রোপচার, পরীক্ষাগার চালু রাখাসহ ১৬টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানের পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগও চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঈনুল আহসান বলেন, এ বছর সরকারি গেজেট অনুযায়ী ঈদের ছুটি পাঁচ দিন। একটানা পাঁচ দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলে রোগীদের ভোগান্তি হবে। এ সময় রোগীদের চিকিৎসাসেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নানা কারণে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ছুটি অনেক বেশি হয়ে গেছে। এত লম্বা ছুটিতে রোগীদের যেন ভোগান্তি না হয় এবং জনবল সংকট না হয়, এ কারণে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে। আমরা হাসপাতালে ছুটি কমিয়ে দিয়েছি। হাসপাতালের বহির্বিভাগ পাঁচ দিন বন্ধ রাখা যাবে না, তিন দিন বন্ধ রাখতে হবে। এ ছাড়া হাসপাতাল চালাতে লোকবল সংকট যেন না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।’
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ রোজার ঈদ হতে পারে, ওই দিন ঈদ ধরে এবার পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে ঈদের দিন সাধারণ ছুটি। আর ঈদের আগের দুই দিন এবং পরের দুই দিন নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৬ নির্দেশনা౼
১। জরুরি বিভাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিকিৎসক পদায়নের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
২। জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমার্জেন্সি ওটি, ল্যাব সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।
৩। কর্মস্থলে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া যেতে পারে।
৪। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিরবচ্ছিন্ন জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ছুটি মঞ্জুর করতে পারবেন।
৫। সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করে ঈদের ছুটিকালে নিজ জেলার মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনবল সমন্বয় করা যাবে।
৬। হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ ইউনিট প্রধানরা প্রতিদিন তাদের বিভাগীয় কার্যক্রম তদারক করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি ল্যাব, এক্স-রে সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অন কল সেবা চালু রাখতে হবে।
৭। ছুটি শুরু হওয়ার আগেই পর্যাপ্ত ওষুধ, আইভি ফ্লুইড, কেমিক্যাল রি-অ্যাজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুত ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে স্টোর কিপার অথবা ছুটি চলাকালে দায়িত্ব পাওয়া স্টাফ অবশ্যই নিজ জেলা ও উপজেলায় অবস্থান করবেন।
৮। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।
৯। ছুটি চলাকালে হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আগামপত্র দিতে হবে।
১০। ছুটি চলাকালে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১১। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা ছুটিকালীন সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করবেন এবং ঈদের দিন কুশল বিনিময় করবেন।
১২। প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি নিলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং দায়িত্ব গ্রহণকারী কর্মকর্তা সব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
১৩। প্রতিষ্ঠান প্রধান ঈদের দিন রোগীদের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন তদারকি করবেন এবং রোগীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
১৪। বহির্বিভাগ একাধারে ৭২ ঘণ্টার বেশি বন্ধ রাখা যাবে না। এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন।
১৫। ক) বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালকে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অধীনে সার্বক্ষণিক জরুরি ও প্রসূতি বিভাগ খোলা রাখতে হবে।
খ) কোনো রোগী রেফার করার আগে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা এবং যাত্রাপথের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
গ) রেফার্ড রোগীরা যাতে অ্যাম্বুলেন্স পায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে।
১৬। যেকোনো দুর্যোগ, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে।
বিএনএনিউজ/ বিএম