27 C
আবহাওয়া
৬:৪৯ অপরাহ্ণ - ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » শেখ হাসিনাকে অপসারণে ২০১৯ থেকে পরিকল্পনা নেয় যুক্তরাস্ট্র! 

শেখ হাসিনাকে অপসারণে ২০১৯ থেকে পরিকল্পনা নেয় যুক্তরাস্ট্র! 


বিএনএ ডেস্ক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন গত ৫ই আগস্ট। সম্প্রতি তার পদত্যাগ নিয়ে দেশে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বারবারই দাবি করেছেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। তাদের মতে, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলেই হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এরই মধ্যে গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সানডে গার্ডিয়ান’ একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা ভূ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

‘Documents show U.S. set in motion plan to oust Hasina’ শিরোনামে প্রকাশিত দ্য সানডে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পরিকল্পনা ২০১৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু নথি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালের প্রথম দিক থেকেই হাসিনাকে অপসারণের পরিকল্পনা করে আসছে। এই নথিগুলোর ওপর ভিত্তি করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত কিছু সংস্থা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। ১৯৯৬ সালে মঙ্গোলিয়া, ২০০১ সালে হাইতি এবং ২০২১ সালে উগান্ডার মতোই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।

দ্য সানডে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট মূলত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট-কে দায়িত্ব দেয়।

নথিগুলোতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারতের প্রভাব প্রতিহত করতে এই প্রকল্প প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের মূল উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে গণতন্ত্রের প্রচার করা। এছাড়া ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অংশীদার হওয়া। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ, এবং সলিডারিটি সেন্টারের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট চারটি মূল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি।

ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটকে অনুদান প্রদান করে। ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি একটি বেসরকারি, অলাভজনক সংস্থা যা মূলত মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এটি স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে বার্ষিক অর্থ বরাদ্দ পায়। অন্যদিকে, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট একটি সরকারি সংস্থা যা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং বিদেশী সহায়তার জন্য কাজ করে।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি থেকে অনুদান পাওয়ার পর ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট ঢাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে একটি প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘প্রমোটিং অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ইনক্লুসিভিটি, এবং রেজিলিয়েন্সি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’। এটি ২২ মাস ধরে চলে এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং কর্তৃত্ববাদ বিরোধী কণ্ঠস্বরকে জোরদার করা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য একটি সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। এর মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট স্থানীয় এবং অপ্রথাগত ফোরামগুলোকে লালন করেছে, যেখানে নাগরিক-কেন্দ্রিক আলোচনা হতো। এই প্রকল্পে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট বিভিন্ন শিল্পী এবং সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছে এবং ১১টি অ্যাডভোকেসি অনুদান প্রদান করেছে। এর ফলে তৈরি করা শিল্পকর্মগুলো প্রায় চার লাখবার প্রদর্শিত হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল সঙ্গীত, অভিনয়, শিল্প প্রদর্শনী এবং থিয়েটার পারফরম্যান্স। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট Lesbian, Gay, Bisexual, Trans, Intersex বিহারি এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করেছে।

এছাড়া, ৭৭ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ৩২৬ জন নাগরিককে ৪৩টি সুনির্দিষ্ট নীতিগত দাবি তৈরিতে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই দাবিগুলো ৬৫ জন সরকারি কর্মকর্তার সামনে উপস্থাপন করা হয়।

 

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের অধীনে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট এবং ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির থেকে ৯ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছিল। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রান্তিক কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে যুবক ও নারীদের ক্ষমতায়ন করা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নারীদের উৎসাহিত করা এবং ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে অহিংস রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা ।

এই নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পাঁচজন কর্মকর্তা এবং ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তিনজন কর্মকর্তা, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের দুইজন কর্মকর্তা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দ্য সানডে গার্ডিয়ান তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। তবে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা এই পুরো প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করেছেন তাদের মধ্যে ডি-সিটি ক্রিস মার্ফি, দক্ষিণ এশিয়া উপকমিটি এসএফআরসি, দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সুমনা গুহ, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, ডিআরএল, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সারাহ মার্গন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ফ্রান্সিসকো বেনকোসমে এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পুরো প্রকল্পটি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছ এবং প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি নাগরিককে সরাসরি প্রভাবিত করেছে। এছাড়া দ্য সানডে গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে দেশের কোথায় কীভাবে শেখ হাসিনাকে অপসারণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচীর নামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তার উল্লেখ রয়েছে ।

বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম/এইচমুন্নী

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ