বিএনএ, ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে অংশ নেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কাজ করা গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি নতুন দল গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। এমনটা জানিয়েছে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ বছরে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে শক্ত হাতে দমন-পীড়ন করেছেন শেখ হাসিনা। গত জুন পর্যন্ত এভাবেই চলেছে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে জুনেই রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে শুরু হয় দমন-পীড়ন। পরে তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়, ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার। গত ১৫ বছর যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর প্রত্যাশা জানিয়েছে ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই শুরু হয় সরকারবিরোধী আন্দোলন। মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, সরকারি আমলা ও মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে ‘জেন জি’ হিসেবে পরিচিত তরুণেরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়, ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও রয়েছেন।
গত তিন দশকের বেশিরভাগ সময় ক্ষমতায় ছিল হয় আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপি। এই দুই দলের সর্বোচ্চ নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বয়স এখন সত্তরের বেশি। এমন অবস্থায় দেশে সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। রয়টার্সকে এমনটাই বলেন মাহফুজ আলম নামে এক শিক্ষার্থী। সরকার এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে লিয়াজোঁ করতে গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্বে আছেন তিনি।
আইন নিয়ে পড়াশোনা করা ২৬ বছর বয়সী মাহফুজ আলম বলেন, এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের আগে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে চায় শিক্ষার্থীরা। এর আগে পরিকল্পনার ব্যাপারে কোথাও বিস্তারিত জানানো হয়নি।
পুরোনো দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষ আসলেই ক্লান্ত–বিরক্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।’ যদিও পরবর্তীতে মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোষ্টে তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, এখনো রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে ছাত্রশক্তির নেপথ্য কারিগর ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা জানান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তাহমিদ চৌধুরী বলেন, তাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর মূল ভিত্তি হবে অসাম্প্রদায়িকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এ ব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলেননি। এমনকি কোন পলিসি নিয়ে তারা কাজ করতে চাইছেন, সেটাও জানাননি। তবে, নির্বাচন কমিশনে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলছেন।
এ নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই আন্দোলনের স্পিরিট ছিল মূলত নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার আর থাকবে না। তা নিশ্চিত করতে গঠনগত সংস্কার দরকার। এতে কিছু সময় তো লাগবেই।’
দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে বলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্তরা। ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে, রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে। কেননা এতদিন এই রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রাখা হতো।
২০০৬ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলো শিরোনামে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক রেহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আইনজ্ঞ কামাল হোসেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে একটি প্রচারণা চালায়। উদ্দেশ্য ছিল একটি রাজনৈতিক দল গঠন। নাগরিক শক্তি নামে রাজনৈতিক দলের নামকরণও করা হয়। এ বিষয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি খোলা চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রহস্যজনকভাবে সেই রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়নি। এবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ড. ইউনূসের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন।
বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/এইচমুন্নী