বিএনএ, ঢাকা: দেশের ৫৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বারদের সম্মানীভাতা বৃদ্ধিসহ ১১ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা। সোমবার (১৯ জুলাই) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারের সম্মানি ভাতা ৮ হাজার টাকা হলেও তা কোনো মেম্বার পাচ্ছে না। শুধু সরকারের দেওয়া ৩৬০০ টাকা পেলেও জীবনধারণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. হোসেন আলী মাস্টার ১১ দাবি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কমপক্ষে ৩০ হাজার করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের মতো অফিস ও জনবল দিতে হবে।
মেম্বারদের শুল্কমুক্ত মোটরসাইকেল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয়সভা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কমপক্ষে ১ জন পুরুষ ও একজন নারী মেম্বারের উপস্থিত থাকার বিধান নিশ্চিত করতে হবে। অধিকতর তদন্ত ছাড়া ইউপি মেম্বারদের নামে ইচ্ছা করলেই থানায় মামলা নেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ইউপি মেম্বারদের আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।
ইউপি মেম্বারদের টিএ/ডি এর বিধান নিশ্চিত করতে হবে। ইউপি স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত মেম্বারদের সম্মানী ও সভা খরচ নিশ্চিত করতে হবে।
পরে একই দাবির বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মুন্না। তিনি বলেন, আমরাই একমাত্র সংগঠক যারা তৃণমূলের মানুষের জন্য কাজ করি তাদের সঙ্গে থাকি। আমরা সবাই নির্বাচিত মেম্বার। অনির্বাচিত কেউ আমাদের সঙ্গে নেই।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ৫৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বাররা সব সময় আপনার পাশে আছে। বতর্মানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারের এই সময়ে আমাদের সম্মানি ভাতা ৮ হাজার টাকা হলেও সেটি আমরা পাই না। সরকারের দেওয়া ৩৬০০ টাকাই শুধু আমরা পাই। তাই আপনার কাছে আমাদের ১১ দফা দাবি জানাচ্ছি। আপনি মানবতার মা আপনি চাইলে সবই সম্ভব। আপনার দেওয়া সবধরণের ভাতা পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। আমরা সকাল থেকে রাতদিন কাজ করেও কোনো সম্মান নাই। অথচ তৃণমূলের মানুষের ভোট পেয়ে আমরা নির্বাচিত। আমাদের সম্মানিত ভাতা ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা না করলে সৎভাবে ডাল, ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা কঠিন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সভাপতি মো. হোসেন আলী মাস্টার বলেন, আমাদের সম্মানীর কথা উল্লেখ্য করার মতো পর্যায়েও নেই। বাজারমূল্যের সাথে এই সম্মানির কোনো সংযোগ নাই। আমরা কি পাই আর কিভাবে চলি, আমাদের সদস্যরা কিভাবে চলে সেটি আমরা জানি আমরাই বুঝি। অথচ আমরা তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমাদের দাবিগুলো একদিকে যেমন আমাদের সম্মানের অধিকারের সঙ্গে জড়িত অন্যদিকে জীবন ধারণের সঙ্গেও।
সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা দীর্ঘদিন নির্যাতিত নিপীড়িত অসহায়। আমাদের সংগঠন ছিল না। এখন আমাদের এই সংগঠন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। গণমাধ্যমের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন আমাদের যৌক্তিক এই দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, আমরা সারাদেশের মেম্বাররা অসহায় হয়ে পড়েছি। অথচ সরকারের গ্রাম পর্যায়ের সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরাই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। উত্থাপিত ১১ দফা দাবি না মানা হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মানববন্ধনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হতে পারে বলে জানান সংগঠনের নেতারা। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরে ১১ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যেগের জন্য সংগঠনের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক তপু বিশ্বাসসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সদস্যরা।
বিএনএনিউজ/বিএম